এবার তো কেউ বলল না, এই বাজেট গরিব মারার বাজেট

আঁকা: জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

আমার এক বন্ধু, নাম বললে হয়তো চিনবেন, কাজ করে এক অনলাইন পত্রিকায়। ঝানু সাংবাদিক সে। গতকাল রাতে কথা হচ্ছিল ওর সঙ্গে।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, ‘হিসাব মেলাতে পারছি না, দোস্ত!’

আমি জানতে চাইলাম, ‘কিসের হিসাব?’

বন্ধু বলল, ‘আরে, অনলাইনের পাঠকের হিসাব।’

‘ব্যাপারটা কী, খুলে বল। আমি তোদের এই সব বুঝিসুঝি না।’

বন্ধু বলল, ‘গতকাল বাজেট প্রস্তাব হলো। ওতে বলা হলো, সিগারেটের দাম বাড়বে। এটা নিয়ে আমরা একটা নিউজও করলাম। অবাক কাণ্ড হলো, অন্য সব নিউজের চেয়ে এটাই কিনা বেশি পঠিত হলো! তো এটা থেকে আমার পর্যবেক্ষণ কী, জানিস?’

আমি বললাম, ‘কী?’

বন্ধু চায়ে লম্বা চুমুক দিয়ে বলল, ‘আমাদের পাঠকের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যাই বেশি!’

২.

বন্ধুকে বললাম, ‘এটা ভালো পর্যবেক্ষণ। এখন ধূমপায়ীরা সংগঠিত হয়ে একটা আন্দোলন না ডাকলেই হয়!’

বন্ধু বলল, ‘সেটার আর...থাক, না বলি।’

বন্ধুর বাকি কথা বুঝে নিতে হলো। ওই যে গানে আছে না, ‘কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়...’। অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই সময়ে কিছু না, সব কথাই হয়তো বুঝে নিতে হবে। না হলে কে যে কী বুঝে নিয়ে বসে থাকবে, তা বলা মুশকিল!

৩.

‘তবে বন্ধু, একটা বিষয় খেয়াল করেছিস?’

সাংবাদিক বন্ধু বলল, ‘কী?’

‘বাজেট প্রস্তাব হলো, কিন্তু এখনো একটা বাণী কানে এল না!’

‘কোন বাণী?’

‘আরে, ওই যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের ভেতরে ঘুরপাক খেতে না খেতেই যে বাণীটা দিতেন বিরোধীদলীয় নেতারা।’

বন্ধু অধৈর্য হয়ে গেল, ‘আরে ব্যাটা, তুই জিলাপি বানাস নাকি? অত প্যাঁচাস কেন? খুলে বল।’

আমি বললাম, ‘আরে, ওই যে বলত না—এই বাজেট গরিব মারার বাজেট! এই বাণীটা আজকাল আর শুনি না। খুব মিস করি রে সেসব দিন!’ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম আমি।

বন্ধু হা হা করে হেসে বলল, ‘বন্ধু, দেশে কি এখন গরিব আছে? গরিব না থাকলে ওই বাণী শুনবি কীভাবে?’

আমি বললাম, ‘শুধু গরিব না, আরও অনেক কিছুই নাই...।’

(আমিও আর কথা শেষ করতে পারলাম না। আমার সাংবাদিক বন্ধু নিশ্চয়ই সব কথা বুঝে নিয়েছে!)

৪.

আমি বললাম, ‘অনেক বাজে প্যাঁচাল পাড়লাম। তুইও সারা দিন বাজেট নিয়ে অনেক মাথা ঘামিয়েছিস। এবার একটা কৌতুক শুনবি?’

বন্ধু বলল, ‘কাউকে কৌতুক শোনানোর জন্য অনুমতি নিতে হয় না। দেখিস না, বিভিন্ন দেশের বড় বড় কর্তারা রোজ কত কৌতুক শোনান। তারা কি কারও অনুমতি নেন?’

আমি মেনে নিলাম, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। এবার কৌতুক বলি।’

বন্ধু বলল, ‘বল না।’

‘কৌতুকটা এরকম—বাজেটে একবার রুগ্‌ণ শিল্প পুনর্বাসনে বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ দিলেন অর্থমন্ত্রী। এর কিছুদিন পর ব্যাংককের সমুদ্রসৈকতে দেখা হয়ে গেল দুই ব্যবসায়ী বন্ধুর। এক বন্ধু জানতে চাইল, কী রে, কীভাবে হলো? ক্যামনে পারলি? আরেক বন্ধু তখন বলল, আসলে মিলটা চালাতে পারছিলাম না, এরপর একদিন আগুন লেগে পুড়ে গেল। বিমা করা ছিল, আবার রুগ্‌ণ শিল্প পুনর্বাসন বরাদ্দ থেকেও কিছু পেলাম। তখন ভাবলাম, যাই, ব্যাংকক থেকে ঘুরে আসি।

এবার প্রথম বন্ধু জানতে চাইল, তোর কী অবস্থা? দ্বিতীয় বন্ধু বলল, খুব বন্যা হলো, আমার পুরো মিলই পানিতে ডুবে গিয়েছিল!

এবার প্রথম বন্ধু চুপিচুপি জানতে চাইল, বন্ধু, বন্যা লাগাও কেমনে?’

আরও পড়ুন