ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা

থেরেসা মে
থেরেসা মে

ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া নিয়ে ভোটাভুটিতে বিশাল ব্যবধানে হারলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্য সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে সদস্যদের ভোটাভুটিতে ২৩০ ভোটে হেরেছেন মে। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৪৩২ জন এমপি চুক্তির খসড়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। পক্ষে ২০২ জন। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন কোনো দলের জন্য এটি সবচেয়ে বড় পরাজয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬৫০ আইনপ্রণেতার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্পিকার ও তাঁর তিন সহযোগী মিলে চারজনের ভোট দেওয়ার অধিকার নেই।

টানা পাঁচ দিন আলোচনার পর পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল রাতে এই ভোটাভুটি হয়। থেরেসা মের এই পরাজয়ের পর যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে অর্ধশতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।

ইতিমধ্যে বিরোধী নেতারা সরকারে বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।

তবে ভোটাভুটির ফলাফল যে থেরেসা মের বিপক্ষে যাবে—এমন ধারণা আগেই করা হয়েছিল। এই ফলাফলে অনেকে মোটেও বিস্মিত নন।

এই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের বিতর্ক, সমঝোতা ও দর-কষাকষি—সবই ভেস্তে গেল। অনিশ্চিত হয়ে গেল ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ। এখন তিন দিনের মধ্যে সরকারকে নতুন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতে হবে। কিন্তু যে বিশাল ব্যবধানে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তা ধারণার অতীত। এই বিশাল ধকল সামাল দিয়ে থেরেসা মে সরকারে টিকে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন থেরেসা মে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ার খবর আসামাত্রই তিনি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এখন এই আস্থা ভোটের দিকেই সবার নজর। আজ বুধবারই এই আস্থা ভোট হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে আগামী ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কথা যুক্তরাজ্যের।

ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য থেরেসা মের খসড়া চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ছিল এই ভোটের অনুষ্ঠান। থেরেসা মের প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিটি বেশির ভাগ সাংসদ বাতিল করায় তাঁর সামনে এখন দুটি পথ খোলা। প্রথমত, চুক্তির নতুন খসড়া তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে নেওয়া। তা না হলে কোনো রকমের চুক্তি ছাড়াই ২৭টি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে যুক্তরাজ্যকে। এতে বেশ বড়সড় সংকটে পড়বে দেশটির অর্থনীতি তথা সামাজিক অবস্থা।

ব্রেক্সিট চুক্তির অন্যতম বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচিত ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ কীভাবে পরিশোধ করবে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জোটের অন্য দেশগুলোর প্রায় ৩২ লাখ মানুষের অবস্থান কী হবে কিংবা ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রায় ১৩ লাখ নাগরিকের ভবিষ্যৎই–বা কী হবে, এগুলোও চুক্তির মধ্যে ছিল। এগুলো ছাড়া নর্দান আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সমস্যার বিষয়টি তো ছিলই।

এসব বিষয়ের খসড়া চুক্তিতে যে সমাধানগুলো দিয়েছেন থেরেসা মে, তা বেশির ভাগ সদস্যদেরই পছন্দ হয়নি। খসড়া চুক্তিটি ৬৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে তুলেছিলেন মে।

এভাবে হেরে যাওয়ার পর থেরেসা মে বলছেন, এ নিয়ে আজ আবার আলোচনা হবে। এরপর একটা পথ বের করা হবে। বিরোধী দলের নেতাদের অনাস্থা ভোটকে স্বাগত জানিয়েছেন মে। আজ এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন মে।

আরও পড়ুন: