ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পাশে ইরান

ইরাকে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
ইরাকে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহাদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। দেশটির দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতাসীন মাহাদিকে গদিচ্যুত করার উদ্যোগ নিলেও ইরান তা প্রতিহত করছে। উভয় পক্ষের ঘনিষ্ঠ সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে শিয়া ধর্মগুরু মোকতাদা আল-সদর দাবি করেছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের ফলে ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ বন্ধ করতে আবদেল মাহাদি তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের আহ্বান জানান।

ইরাকে কয়েক বছর ধরে বড় দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জনসেবা খাতের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কিছুদিন পরপরই বিক্ষোভ হয়ে আসছে। বিশেষ করে গরমকালে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের ঘাটতি নাগরিকদের তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এ সময়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন বাগদাদ ও অন্যান্য শহরে নেমে পড়েন। তখন বিদ্যুৎ বা পানির সমস্যার সঙ্গে আরও নানা সমস্যা যুক্ত হয়। এসব আন্দোলন একদিকে ক্ষমতাসীনেরা দমন করতে চান, অন্যদিকে বিরোধী রাজনীতিকেরা এটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বরাবরই সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয় না।

কয়েক বছর ধরে যে ধরনের বিক্ষোভ বা আন্দোলন হচ্ছে, এবারের আন্দোলন সেগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। তা এ কারণেই যে এবারের বিক্ষোভ হয়েছে সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই বিক্ষোভ কারও ডাকে হয়নি। কোনো সংগঠন, কোনো দল বা গ্রুপ এর আয়োজন করেনি। সরকারের অকার্যকর ব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায্য প্রতিবাদ করতে আসা নিরপরাধ ইরাকিদের খোদ ইরাকি নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করে মেরেছেন।

আবদেল মাহাদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করার জন্য সদর তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হাদি আল-আমিরির সঙ্গে কথা বলেছেন। আমিরির নেতৃত্বাধীন ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের জোট সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি।

তবে বুধবার বাগদাদে এক গোপন বৈঠকে ইরানের অভিজাত বাহিনী বলে পরিচিত রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) কুর্দি বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলায়মানি হস্তক্ষেপ করেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের ব্যাপারে অবগত এমন পাঁচটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সোলায়মানি আমিরি ও তাঁর মিলিশিয়া নেতাদের আবদেল মাহাদিকে সমর্থন করতে বলেছেন।

আমিরি ও সদরের মুখপাত্রদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইরানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বুধবারের বৈঠকে সোলায়মানির উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোলায়মানি সেখানে পরামর্শ দিতে গিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরাকের নিরাপত্তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমরা অতীতেও তাদের সহায়তা করেছি। আমাদের কুর্দি বাহিনীর প্রধান নিয়মিত ইরাক এবং আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলে সফর করেন। বিশেষত মিত্ররা আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সব সময় এগিয়ে আসি।’

সোলায়মানির কুর্দি বাহিনী ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননের তেহরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের সমন্বয় করে। তিনি মাঝেমধ্যেই ইরাকে যান। তবে তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপ ইরাক এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলজুড়ে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই মাসের শুরুর দিকে ইরাকের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বিক্ষোভ থামাতে সহায়তা করতে বাগদাদের ছাদে স্নাইপার মোতায়েন করেছিল।

ইরাকে আরও সংকটের সৃষ্টি হলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকে দেশটিতে ইরান ক্রমাগত যে প্রভাব বিস্তার করছে, তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।