ইরাকে এক মার্কিন চিঠি নিয়ে ধন্দ

ইরাকে এখন প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এএফপি
ইরাকে এখন প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এএফপি

ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে এক মার্কিন সামরিক চিঠি নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। চিঠিতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার উল্লেখ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে চিঠির বিষয়ে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। মার্কিন সেনারা ইরাক ছেড়ে যাচ্ছেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন তাঁরা।

গত শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর ইরাকের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। গত রোববার পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ইরাকে মার্কিন কিংবা কোনো বিদেশি সেনা থাকতে পারবেন না।

ইরাকের আইনপ্রণেতারা মনে করেন, মার্কিন বাহিনী ইরাকে ঢুকে সোলাইমানিকে হত্যা করায় তাঁদের (ইরাক) সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রস্তাবে দেশটি থেকে সব বিদেশি সেনাকে ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জাতিসংঘে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় ইরাকি পার্লামেন্ট।

ওই প্রস্তাব পাসের পর ওই দিনই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরাকে অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল বিমান ঘাঁটি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। সেই অর্থ ফেরত না দিলে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হবে না।

এই পরিস্থিতির মধ্যে নাটকীয়ভাবে একটি চিঠি প্রকাশ হয়ে পড়ে, যাতে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, চিঠিটি সম্মিলিত যৌথ অভিযানের উপপরিচালক আবদুল আমিরকে লিখেছেন ইরাকে মার্কিন সামরিক টাস্ক ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইলিয়াম এইচ সিলি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ইরাকের সার্বভৌমত্বের যথাযোগ্য ক্ষেত্রে এবং ইরাকি পার্লামেন্ট ও ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সিজেটিএফ-ওআইআর (কমবাইন্ড জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-অপারেশন ইনহেরেন্ট রিসলভ) ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য প্রস্তুত করতে সামনের দিনগুলো ও সপ্তাহ ধরে সেনাদের প্রতিস্থাপন করবে। সে ক্ষেত্রে ইরাক থেকে সরে যাওয়া নিরাপদ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা নিশ্চিত করতে বর্ধিত বিমান চলাচলসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদের গ্রিন জোনে আরও যৌথ বাহিনী নিয়ে আসছে‌—এমন ধারণাও লাঘব হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।

এ চিঠির ব্যাপারে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেছেন, ‘ইরাক ছাড়ার (সেনা প্রত্যাহার) এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি জানি না চিঠিটা কিসের...আমরা খুঁজে দেখছি কোথা থেকে সেটা (চিঠি) এসেছে, সেটা কী। তবে ইরাক ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’

এর পরই মার্কিন সেনাদের সর্বোচ্চ পদধারী জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তিনি বলেন, চিঠির বিষয়টি ভুল ছিল। সেটি ছিল কতগুলো বাজে শব্দের একটি খসড়া। এতে কোনো সই ছিল না এবং এটা প্রকাশ করার কথা ছিল না। ইরাকিসহ অন্যদের কাছে তা বিতরণ করা হয়েছিল ইনপুটের জন্য। তিনি বলেন, বিমান চলাচলের বিষয়টি সমন্বয়সহ বিভিন্ন কাজের জন্য কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ইরাকি সামরিক ব্যক্তির কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল। এরপর চিঠিটি এ-হাত ও-হাত হয়ে নানা হাতে চলে যায়। এখন এটা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে।

জেনারেল মার্ক মিলিও নিশ্চিত করেন মার্কিন সেনারা ইরাক ছেড়ে যাচ্ছেন না।

বিবিসি যৌথ সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, চিঠিটির মাধ্যমে ইরাকিদের জানানো হয়েছিল, মার্কিন সেনারা গ্রিন জোন থেকে সরে গিয়ে অন্য কোথাও সুরক্ষা দিতে মোতায়েন হচ্ছে। এর মানে এই নয় যে, সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে।

২০০৩ সালের মার্চে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুতের মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে লাখ-লাখ মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে। এই মার্কিন সেনারা আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করছে।