মোদির ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয়: মমতা

গতকাল বুধবার রাজ্য সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রথম আলো
গতকাল বুধবার রাজ্য সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রথম আলো

করোনা নিয়ে লকডাউনের আবহে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতবাসীর কল্যাণ এবং উন্নয়নের জন্য ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পর দেশবাসী নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল। ভেবেছিল গরিব মানুষের জন্য বাঁচার পথ খুলে যাবে।

এদিকে এই প্যাকেজ নিয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ এই প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর সেই ভাষণের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদির এই প্যাকেজকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ওরা আশা দিয়ে ধোঁকা দিল। এই আর্থিক প্যাকেজ একটি বিগ জিরো। আশা ছিল কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর জন্য নতুন কিছু ঘোষণা করবে, আশার বাণী শোনাবে, শিল্প বাঁচাতে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে, করোনার পরিকাঠামো তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নেবে। কিন্তু কিছুই করল না। ভাঁওতা দিল। এটা একটা অশ্বডিম্ব, আইওয়াশ, ধোঁকা, ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। জিরো, জিরো, আর বিগ জিরো।’

গতকাল বিকেলে মোদির ২০ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সংবাদ সম্মেলনের পর মমতা রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্যাকেজকে কটাক্ষ করে এই মন্তব্য করেন।

মমতা বলেন, রাজ্যকে টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কর্মসংস্থান কীভাবে হবে, বলা হয়নি। বাজারে চাহিদা বাড়ানোর কথা বলা হয়নি। অনুদানের কথা বলা হয়নি। কোভিড মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, তার দিশা দেওয়া হয়নি। এমনিতে দেশব্যাপী চলছে আর্থিক মন্দা। মানুষের হাতে টাকা নেই। অভাব চলছে। তাই এই ঘোষণার পর কী হবে দেশবাসীর, কেউ জানে না।

মমতা আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৩ লাখ কোটি রুপির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। অথচ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৯০ হাজার কোটি রুপি ঋণ দেওয়া হয়। তাই সারা দেশের জন্য ৩ লাখ কোটি এমন কী বড় ব্যাপার? প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বলেন, ‘আত্মনির্ভরতার কথা শুধু বললে হয় না। আমরা হয়েছি। বাংলা স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। আর এই লক্ষ্যে এখানের ক্ষুদ্র শিল্প আর স্বনির্ভর সংগঠনের মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার পিপিই, ৪৫ লাখ মাস্ক, ২ লাখ ৫০ হাজার লিটার স্যানিটাইজার উৎপাদন করেছি।’

মমতার এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র একহাত নেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর। বলেন, ২০ লাখ কোটির আর্থিক প্যাকেজ মানুষকে ভুল বোঝাতে ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে এই প্যাকেজের মাধ্যমে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ মানুষের হাতে পৌঁছাবে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আরও জানান, আর্থিক প্যাকেজের ওই ২০ লাখ কোটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ঘোষিত ৮ দশমিক ৪ লাখ কোটির প্যাকেজ। সরকার সেই টাকাও আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে ধরেছে। এরপর আবার মমতা যোগ করেন, ‘অমিত মিত্র জনধন যোজনার ১০ হাজার কোটি রুপি ধরেননি। ওটা ধরলে জিডিপির জিরো, জিরো, জিরো শতাংশের প্যাকেজ হয়েছে। তাই পুরোটাই ভাঁওতা।’