শপিং মলে এখনই ঠাঁই নেই... ঠাঁই নেই

ঈদের কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়। বসুন্ধরা সিটি, ঢাকা, ১৭ মে। ছবি: প্রথম আলো
ঈদের কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়। বসুন্ধরা সিটি, ঢাকা, ১৭ মে। ছবি: প্রথম আলো

২০০৪ সালে যখন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল উদ্বোধন করা হয়, তখন কেউ কেউ ধারণা করতেন—এক মলই মেটাবে ঢাকাবাসীর সব চাহিদা। তবে ঢাকা শহরে যেভাবে প্রতিদিন জনসংখ্যা যোগ হয়েছে, তাতে এই শপিং মল ঢাকাবাসীর জন্য ‘ছোটই’ হয়ে গেছে।

আজ ছিল রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার। ইতিমধ্যে কোনো কোনো কর্মজীবীর হাতে এসে পড়েছে উৎসব বোনাস। ব্যস, আর বসে থাকা কেন? সবাই ছুটে চলেছেন শপিং মলগুলোতে, ঈদের পোশাক, জুতা, গয়না কেনাকাটা করতে!

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা দীপা। দুই হাতে বেশ কয়েকটি প্যাকেট। কিছু কিনেছেন নিজেদের জন্য, কিছু আত্মীয়স্বজনের জন্য। দীপা বলেন, পরিবারের সবার জন্যই কিছু কিছু কেনাকাটা করেছেন। ঈদে উপহার তো দিতেই হয়।

সকাল দশটা সাড়ে দশটা নাগাদই ভরে গেছে পান্থপথের এমাথা-ওমাথা, ভিড় বলে একটি সাইকেল ঢোকানোর জায়গাও নেই। কোনোক্রমে প্রজাপতি গুহার পরের গলি দিয়ে পেছন পথে ঢোকার চেষ্টা করে দেখা গেল, এই পথেও তিল ধারণের জায়গা নেই। ঢোকার পথে চেকিং, এখানেও লম্বা লাইন। সব মিলিয়ে শুধু মার্কেটে ঢুকতেই লাগবে এক ঘণ্টার মতো।

ভেতরে ঢুকেও নড়াচড়া করার জো নেই, চলন্ত সিঁড়িগুলোতে পর্যন্ত তিল গড়ানোর জায়গা নেই। প্রতিটি লিফটের মুখে জটলা। পোশাকের দোকান তো বটেই, খাবারের দোকান, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান—কোথাও ভিড় বেশি ছাড়া কম নয়।

নিচতলায় গোলচত্বরে মানুষের ঘোরাফেরার ফাঁকেই জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি নিজ নিজ প্রচারণার কাজ। এক পাশে চলছে অদ্ভুত মুখোশ চশমা পরে ছবি তোলা। স্টলে থাকা কর্মী জানালেন, এটি একটি মোবাইল কোম্পানির প্রচারণা। যাঁরা এ রকম মুখোশ চশমা পরে ছবি তুলবেন, তাঁদের ছবি আপলোড করা হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ছবিগুলোর মধ্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশি লাইক পাবেন, তাঁরা জিতে নেবেন একটি স্মার্টফোন।

নিচতলার দেশি-বিদেশি বুটিকগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। কেউ জামার মাপ খুঁজছে, কেউ ডিজাইন। আয়নার সামনে গায়ে লাগিয়ে যে দেখবে কেমন দেখায়, তার জন্যও ধরতে হচ্ছে লাইন।

ওপরে উঠতেই রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান। আগে এই দোকানগুলোতে নানান নামের বাহার থাকলে এবার শুধুই লম্বা গাউনের প্রচলন। লেভেল থ্রির একটি দোকান ভায়লেটের বিক্রয়কর্মী জানান, এবারের ঈদে গাউন ধরনের পোশাকের চাহিদাই বেশি। তাই ঈদ মাথায় রেখে তাঁরা সুতিতেও এনেছেন এমন পোশাক। আর কাজ করা পোশাকও চলছে দারুণ।

আট মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে এভাবেই দোকানের সামনে বসে পড়ে সুহান আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
আট মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে এভাবেই দোকানের সামনে বসে পড়ে সুহান আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

শাড়ির দোকানগুলোতেও বেশ ভিড়, তবে তুলনামূলক কম। রূপরেখা শাড়িজের বিক্রয়কর্মী জসীম জানালেন, শাড়ির ক্রেতারা নাকি এখনো আসেননি। তবে অনেক দোকানি দুঃখ করে জানান, শাড়ির প্রতি নারীদের আগের সেই আবেগ কাজ করে না।

ঈদ বলে শুধু কাপড় কেনা হচ্ছে এমনও নয়। ইলেকট্রনিকস আর ক্যামেরার দোকানেও বিক্রি দারুণ। ধানমন্ডি থেকে পান্থ এসেছেন বন্ধুদের নিয়ে। কিনবেন ক্যামেরা। পান্থ বললেন, নতুন চাকরি পেয়েছেন, ঈদের বোনাসের টাকা দিয়ে শখের ক্যামেরা কিনবেন।

দোতলা-তিনতলার পোশাকের দোকানে যত না ভিড়, তার চেয়ে অনেক ভিড় দেশীয় বুটিকের দোকানগুলোতে। সেখানে থাকা বসার জায়গাগুলোতেও একটু জায়গা নেই। তাই আট মাসের ছেলে সাদিদকে নিয়ে বাবা সুহান আহমেদ বসে পড়েছেন দেশী দশের সামনের মেঝেতেই। সুহান বলেন, বাচ্চারা ঘুরেফিরে ক্লান্ত। তাদের মায়ের এখনো কিছু কেনাকাটা বাকি। তাই ছেলেদের নিয়ে তিনি অপেক্ষা করছেন এখানেই।

রোজা রেখে গরমে ঘুরতে ঘুরতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। মার্কেটের পেছনে থাকা প্রাথমিক চিকিৎসার কেন্দ্রের বাইরে দেখা মেলে পুরান ঢাকা থেকে আসা আবিরের। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া আবির রোজা রেখে বেড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। মা বলছেন রোজা ভাঙতে কিন্তু সে রোজা ভাঙতে রাজি নয়।

এরই মধ্যে শুরু হয় জুমার নামাজ। সেই নামাজের কাতার ওপারের মসজিদ পার হয়ে রাস্তাজুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে—বসুন্ধরা সিটির পূর্ব পাশের পুরো জায়গাজুড়ে। কোথায় আর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিং মল, ঢাকার মানুষের চাপে সে মলও ছোট তরি, ঢাকার মানুষের সমাগমে গিয়েছে ভরি।