মা-মেয়ের ঈদের রান্না

>
রেঁধেছেন মা নাশিদ কামাল, পরিবেশন করেছেন  আরমিন মুসা। ছবি: খালেদ সরকার
রেঁধেছেন মা নাশিদ কামাল, পরিবেশন করেছেন আরমিন মুসা। ছবি: খালেদ সরকার
নাশিদ কামাল ও আরমীন মুসা। মা-মেয়ে দুজনই সংগীতশিল্পী। কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীনের উত্তরসূরি তাঁরা। নকশার অনুরোধে রেঁধেছেন ঈদের রান্না, দিয়েছেন রেসিপি। পাঠকদের শুনিয়েছেন ঈদের গল্প।

পুরানা পল্টনের বাড়িতে ছিল আমাদের যৌথ পরিবার। কোরবানি ঈদের দিন বাড়ির উঠানে বানানো হতো মাটির চুলা। পান খেতে খেতে আমার দাদি লুৎফুন্নেসা আব্বাস (লোকসংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীনের স্ত্রী) জায়েদের সঙ্গে মিলে রাঁধতেন ঈদের রান্না। মাংস আধা সেদ্ধ হতে না হতেই বাবা-চাচারা প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেন কোরবানির মাংসের স্বাদ পরখ করতে। আর ওই সময় আমরা বোনেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলিয়ে আসতাম কোরবানির মাংস।’ ‘সেই ছোটবেলার ঈদগুলো ছিল সত্যিই অন্য রকম। বড্ড মিস করি সেই দিনগুলো’, বলছিলেন সংগীতশিল্পী নাশিদ কামাল।

নকশার ছবি তোলার জন্য ওদিকে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলেন সংগীতশিল্পী আরমীন মুসা, নাশিদ কামালের মেয়ে। ব্যস্ততার মধ্যেই মা-মেয়ে সময় দিলেন নকশার জন্য। মা রাঁধলেন ঈদের রান্না, সহযোগিতা করলেন আরমীন।

ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকেই আরমীন বলছিলেন, মায়ের হাতের রান্না কিন্তু অসাধারণ। এখন বাসার রান্নার যাবতীয় কাজ নাশিদ কামালই সামলান কিন্তু আরমীনও যে রান্নায় পটু, তা জানা গেল মায়ের কাছেই। আরমীনের হাতে রান্না করা মুরগির মাংস খুব ভালো হয় বলে জানালেন তিনি।

আরমীন মুসা ও নাশিদ কামাল
আরমীন মুসা ও নাশিদ কামাল

দেশের বাইরে পড়াশোনা করতেন আরমীন। আর তখন নিজেই রান্না করে খেতে হতো। আর এভাবেই রান্নায় হাত পাকিয়েছেন আরমীন। তবে মা নাশিদ কামালের রান্না শেখার গল্পটা শুরু হয় বেগম আব্বাসউদ্দীনের কাছে। ঝুরা মাংস, রসুন মাংস, তিল্লি রান্না, শুঁটকি, নানা পদের মাছের রান্না শিখেছেন দাদির কাছে। ফুফু সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের প্রভাব আছে নাশিদের রান্নায়। ফুফুর কাছ থেকে শিখেছেন আচারি মাংস আর লেবু দিয়ে ইলিশ মাছের রান্না।

‘আসলে রান্নার প্রতি ঝোঁকটা বরাবরই আমার বেশি। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে দেখতাম দাদি মজার মজার রান্না করে রেখেছেন। তা দেখে রান্নার প্রতি আগ্রহটা জন্মায়। মানুষ যখন দেশের বাইরে গিয়ে পোশাক কিনে, আমি তখন কিনি নানা ধরনের মসলা, রান্নার সরঞ্জাম, না হলে তৈজসপত্র’, বলছিলেন নাশিদ কামাল। মায়ের মতো রান্নার ঝোঁক থেকেই বিদেশে থাকার সময় আরমীন তাঁর রান্না নিয়েই খুলেছিলেন একটা ফুড ব্লগ।

এখন ততটা রান্নার সময় পান না আরমীন। দিন কেটে যায় গান নিয়ে। ঈদের সময় ব্যস্ততা বাড়ে। ‘অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময়টায় গানের অনুষ্ঠানের চাপ একটু বেশি থাকে।’ তারপরও নাশিদ কামাল তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন। মেয়ে আরমীন মুসাকে নিয়ে একটু সময়ের জন্য হলেও ঘুরে আসেন ফেরদৌসী রহমানের বাসা থকে। বললেন, ‘ফেরদৌসী নানুর বাসায় আমার সব কাজিনরা আসে। অল্প সময়ের জন্য হলেও হই-হুল্লোড়ে বেশ ভালোই কাটে সময়টা।’ আর তখন একটু হলেও নাশিদ কামাল খুঁজে পান ছেলেবেলার ঈদের স্বাদ।