মনের নিয়ন্ত্রণে ধ্যান

ধ্যান শরীর ও মনে আনে প্রশান্তি। মডেল: সারাকা। ছবি: সুমন ইউসুফ
ধ্যান শরীর ও মনে আনে প্রশান্তি। মডেল: সারাকা। ছবি: সুমন ইউসুফ

ধ্যান বা মেডিটেশন হচ্ছে এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে মনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। ধ্যানের মাধ্যমে নতুন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ তৈরি করা যায়। দেখা যায় আমাদের মন একসঙ্গে অনেক কিছু চিন্তা করতে থাকে। ধ্যানের মাধ্যমে একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। যেমন হতে পারে নিশ্বাসের কিংবা শারীরিক সংবেদনের দিকে মনোযোগ দেওয়া। এতে চিন্তাশক্তি বাড়বে, দ্রুত শিখতে পারবেন এবং অনায়াসে মনে রাখতে পারবেন। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, মনকে প্রশান্ত রাখতে, রোগপ্রতিরোধ কিংবা নিরাময়ের ক্ষেত্রেও মেডিটেশন খুব কার্যকর।

ধ্যানের ধরন

বিভিন্ন ধরনের ধ্যান হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন’। অনেকে সময় অতীতের ঘটনা আমরা বর্তমানে বয়ে নিয়ে বেড়াই। অতীতের কষ্ট বা ভুলগুলো বর্তমানকে প্রভাবিত করে। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন বর্তমানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আছে ইমাজিনারি, স্পিরিচুয়াল মুভমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের ধ্যান।

যেভাবে করবেন

একদম নতুনদের জন্য প্রথমেই একটানা বেশিক্ষণ ধ্যান করা কঠিন। তাই প্রথমেই অ্যাডভান্স স্তরে না গিয়ে অল্প অল্প করে শুরু করা যেতে পারে। এর ফলাফল পেতে হলে ধারাবাহিক অভ্যাসের প্রয়োজন। অনেকে আছেন অল্প কয় দিন করে দ্বিধান্বিত থাকেন, আসলেই ঠিক হচ্ছে কি না। কিন্তু নিখুঁত ধ্যান (পারফেক্ট মেডিটেশন) বলতে কিছু নেই। একেকজনের অভিজ্ঞতা একেক রকম হতে পারে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে ধারাবাহিকতা।

ধ্যানের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হতে পারে ভোরবেলা, যখন নিজের মন শান্ত থাকে। পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশও থাকে শান্ত। এ ছাড়া কোন ধরনের ধ্যান আপনি করবেন সেটির ওপর নির্ভর করে আপনি দিনের যেকোনো সময় ধ্যানের অভ্যাস করতে পারেন।

খুব চাপে আছেন (স্ট্রেসফুল) কিংবা খুব রেগে আছেন, এমন সময়ে ধ্যানচর্চা করার চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু সেই সময়ে মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টসাধ্য, যদি আপনি ধ্যানে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে না থাকেন। তাই শুরুতে শান্ত মনে এবং শান্ত পরিবেশে অভ্যাস শুরু করা দরকার। তবে ধ্যান কোনো প্রশিক্ষক বা গুরুর মাধ্যমে করতে পারলে দ্রুত এর ফল পাওয়া যেতে পারে।

নিশ্বাসের ধ্যান

যাঁরা নতুনভাবে শুরু করতে চাচ্ছেন তাঁদের জন্যে ছোট একটা উদাহরণ হিসেবে নিশ্বাসের ধ্যানের কথা উল্লেখ করি। প্রথমে কয়েক মিনিট অভ্যাস করে তারপর ধাপে ধাপে সময় বাড়াতে পারেন।

একটি আরামদায়ক জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে শুধু নিজের নিশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। স্বাভাবিক নিশ্বাস নেওয়া ও ছাড়া এবং খেয়াল করা নিশ্বাস কোথা থেকে আসছে। এটা কী আপনার বুক নাকি গলা থেকে কিংবা আপনার নাক থেকে আসছে। এর মধ্যেই খেয়াল করবেন, আপনার মনোযোগ হয়তো অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। মনোযোগ অন্য কোথাও চলে গেলে ধীরে তা আবার নিশ্বাসের প্রতি নিয়ে আসুন। এ রকমভাবে আরও কিছুক্ষণ ধ্যান করার পর লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে শরীরকে শিথিল করে চোখ খুলে ফেলবেন।

আরও কিছু উপায়

গাইডেড মেডিটেশন ট্র্যাকে পুরো প্রক্রিয়া শুনতে শুনতে ধ্যান করতে পারেন। প্রচুর মেডিটেশন-উপযোগী মিউজিক, গাইডেড মেডিটেশন ট্র্যাক মিলবে ইন্টারনেটে। বাজারে পাওয়া যায় মেডিটেশন-বিষয়ক বই। হেডস্পেস, কোয়ান্টাম মেথড, চোপরা সেন্টার্ড লাইফস্টাইল ইত্যাদি ওয়েবসাইটেও ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। নামিয়ে করে নিতে পারেন মাইন্ডবডি কানেক্ট, হেডস্পেস, ওম্ভানা, স্মাইলিং মাইন্ডের মতো মেডিটেশন অ্যাপ। আর একা একা বুঝে উঠতে না পারলে বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে শিখে নিতে পারেন।

উপকারিতা

মেডিটেশনের বেশ কিছু উপকারিতা আছে—

l মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে

l নিজের প্রতি সচেতনতা বাড়ায়

l হতাশা কমায়

l মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে

l মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

l রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

l দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ কমায়

 নিজের প্রতি মনোযোগ, নিজেকে ভালোবাসা, জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করে ধ্যান বা মেডিটেশন।

অ্যানি বাড়ৈ : জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, কাউন্সেলিং ইউনিট ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়