সুস্থতার সঙ্গী সাইকেল

জীবনকে সহজ করতে ও শরীরকে ফিট রাখতে সাইকেল চালাতে পারেন। ছবি: অধুনা
জীবনকে সহজ করতে ও শরীরকে ফিট রাখতে সাইকেল চালাতে পারেন। ছবি: অধুনা

আজ আপনাদের এমন একটি উপকরণের কথা বলব, যার কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। যার সবকিছুই ভালো। এই উপকরণের নাম বাইসাইকেল। এটি নিয়মিত চালালে শরীর ভালো থাকে। জ্যামে বসে থাকতে হয় না। জ্বালানির অপচয় হয় না, ফলে টাকা বেঁচে যায়। জ্বালানি ব্যবহার না করার ফলে পরিবেশ ভালো থাকাসহ ব্যবহারে সবকিছুই উপকারী। দুই চাকার পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে বাইসাইকেল বেশ জনপ্রিয়। শহরের অলিগলিতে আজকাল বিষয়টি সহজেই টের পাওয়া যায়।

সব বয়সীদের জন্য
শিমুল এবারই ক্লাস টুতে উঠল। ভালো রেজাল্টও করেছে। বাবা বলেছিলেন, ভালো রেজাল্ট করলে একটা সাইকেল কিনে দেবেন। তাই তো শিমুল বায়না ধরেছে, সামনে জন্মদিনে তার একটা লাল সাইকেল চাই। অবশেষে বাবা অনেক দেখেশুনে তার জন্য নিয়ে আসেন লাল রঙের ছোট সাইকেল। সাইকেল পেয়ে যারপরনাই খুশি সে। অল্পতেই শিখে ফেলল সাইকেল চালনা। এরপর থেকেই সারা দিন ক্রিং ক্রিং শব্দে মাতিয়ে তুলছে বাড়ি। স্কুল থেকে ফিরেই বেরিয়ে পড়ছে সাইকেল নিয়ে। এ তো গেলে ছোটদের কথা, সাইকেল সব বয়সীরা চালাতে পারে এবং সবার জন্যই দরকারি। দুরন্ত বাইকের ব্র্যান্ড ম্যানেজার এ এম রাকিবুল আহসান বলেন, দুরন্ত তিন শ্রেণির ক্রেতাদের জন্য সাইকেল তৈরি করে—শিশু, তরুণ ও পূর্ণবয়স্ক।

বয়স আর উচ্চতা অনুযায়ী সাইকেল
সাইকেল কেনার আগপর্যন্ত সাইকেলকে ঘিরে শিশুদের আগ্রহের কমতি থাকে না। সাইকেল কেমন করে চালায়, পারবে তো বন্ধুকে সাইকেল রেসে হারিয়ে দিতে ইত্যাদি কল্পনা ঘুরপাক খায় মাথায়। বড়রাই সাইকেল চালাতে গিয়ে কতবার যে পড়ে যান! ছোটদের জন্য তৈরি হয় বিশেষ ধরনের সাইকেল। ইচ্ছে করলেই যেকোনো মাপের সাইকেল শিশুদের দেওয়া ঠিক হবে না। উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী সাইকেল চালাতে হয়। দুরন্ত বাইকের এ এম রাকিবুল আহসান জানান, দুরন্ত সাইকেল ১২ থেকে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত পাওয়া যায়। বয়সের ওপর সাইকেলের আকার নির্ভর করে। এ ছাড়া অন্য কোম্পানির সাইকেল আরও বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়।

জ্যাম ও পরিবেশবান্ধব
গাড়ির কালো ধোঁয়ায় জীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন পরিবেশবান্ধব বাহন হলো সাইকেল। আর ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তায় বা অলিতে-গলিতে নির্বিঘ্নে চলার মতো উপযুক্ত বাহন সাইকেলের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে। তবে ছোটদের সাইকেল চালনার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার সোনামণির বয়স যদি ১০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে, তাহলে সন্তানের সাইকেল চালানোর সময় নিজে উপস্থিত থাকুন অথবা নির্দিষ্ট খেলার মাঠ বা এলাকা নির্ধারণ করে দিন।

দরদাম
এ এম রাকিবুল আহসান জানান, আকার ও মানের ওপর সাইকেলের দাম নির্ভর করে। বাজারে বড়দের মতো ছোটদের সাইকেলেরও বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। শিশুদের উপযোগী দুরন্ত সাইকেলের দাম ২ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। একটু বড়দের সাইকেলের দাম ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর দুরন্ত বড় আকারের সাইকেলের দাম ৬ হাজার ৫০০ থেকে ১১ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের কম দামের মধ্যে ছয় থেকে আট বছর বয়সী ছোটদের সাইকেল কিনতে চাইলে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। আর আপনি যদি একটু বড়, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের জন্য স্মুথ ও কনফিডেন্ট রাইডিং সাইকেল চান, দামটা একটু বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাইকেলের দাম হতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারে তৈরি সাইকেলগুলোর দাম আরও বেশি হতে পারে। তবে বংশাল ঘুরে দেখা গেছে, লাখ টাকার ওপরও অনেক সাইকেল দেশের বাজারের রয়েছে।

কোথায় পাবেন
আমাদের দেশে সাইকেলের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ঢাকার বংশাল। এ ছাড়া সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সায়েদাবাদ, উত্তরা, ধানমন্ডি, টঙ্গী বাজার এবং ঢাকার বাইরে বড় বড় শহরে বাইসাইকেল পাওয়া যায়। সাইকেল মূলত ভারত, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে এর মূল্যও বেশ চড়া।

উপকারিতা
বিকল্প বাহন বা ফ্যাশনের অংশ যা-ই বলি না কেন, সাইকেল চালানো একটি ব্যায়ামও বটে। এর উপকারিতা অনেক। সাইকেল চালালে ফিটনেস ঠিক থাকে। সাইকেল চালালে শারীরিক পরিশ্রম হয়। এর ফলে ডায়বেটিসের আশঙ্কা কমে যায়। হাড়, পেশি ও অস্থিসন্ধি গঠনেও সাহায্য করে।

সতর্কতা
রাস্তায় চলতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। যেকোনো বাহন চালাতে গেলেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাইকেল চালাতে গেলেও কিছু নিয়ম মনে রাখা উচিত। বাইসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট, চশমা ও গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। অন্য সাইক্লিস্টদের সঙ্গে রেস করার মনোভাব পরিহার করুন। রাতে সাইক্লিং করলে অবশ্যই সামনে-পেছনে লাইট ব্যবহার করুন।