করোনার এই সময়ে শিশুর টিকা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন ঘরে থাকছেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু এই অবরুদ্ধ সময়ের মধ্যেই পেরিয়ে যাচ্ছে অনেক শিশুর টিকা দেওয়ার নির্ধারিত সময়। এতে বাবা–মায়েরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন।

বিশেষ করে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বেশি। কারণ, তাদের টিকা এখনো শুরুই করা যায়নি। শিশুর জীবনের প্রথম টিকাটি হলো বিসিজি বা যক্ষ্মার টিকা। জন্মের ১৪ দিনের মধ্যে এই টিকা দেওয়ার কথা। তা না হলে অন্তত দেড় মাস বয়সে। তবে নবজাতকের টিকা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, ততই ভালো।

আমাদের দেশে দেড় মাস থেকে ১৫ মাস পর্যন্ত মোট পাঁচবার টিকাকেন্দ্রে যেতে হয়। প্রথম তিনটি টিকা দিতে হয় দেড় মাস, আড়াই মাস ও তিন মাস ১৫ দিনে। যক্ষ্মার টিকা ছাড়া এই টিকাগুলো মোটামুটি একই ধরনের। শেষ দুটি হলো এমআর (হাম ও রুবেলা) টিকা। এটি দিতে হয় ৯ মাস শেষ হলে এবং ১৫ মাসে। একই ধরনের দুটি টিকার মধ্যে ন্যূনতম এক মাস সময়ের ব্যবধান থাকতে হয়। এ কারণে আপনার টিকার কার্ডে পরবর্তী যে তারিখে টিকা দেওয়ার কথা লেখা আছে, তার আগে দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরে দিতে বাধা নেই। কত দিন পর দেবেন বা কত দিন দেরি করা যাবে, সেটি কোথাও নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। তবে শিশুর ২ বছর বয়সের মধ্যে আপনাকে সবগুলো টিকা শেষ করার কথা। তাই প্রথম তিনটি টিকা দেওয়ার বেলায় আপনার শিশুর বয়স এই মুহূর্তে ২ মাস বা ৪ মাস, যা–ই হোক না কেন, আপনি ৩-৪ মাস অপেক্ষা করতেই পারেন। আবার আপনার শিশুর বয়স যদি ৯ মাসের বেশি হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ৯ মাসে যে টিকাটি দেওয়ার কথা ছিল, সেটি ১৩ বা ১৪ মাস বয়সে দিলে ক্ষতি হবে না। কারণ, ১৫ মাসে আপনার বাচ্চার যে টিকা দেওয়ার কথা, তার এক মাস আগে বাকিগুলো দিয়ে ১৫ মাসে শেষ এমআর টিকা দিলেই সরকারি সবগুলো টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে। আবার যাদের বাচ্চার বয়স ১৫ মাস বা তার বেশি, তাদের ক্ষেত্রে ১৫ মাসের টিকাটি ২ বছর বয়সের মধ্যে যেকোনো সময় দিতে পারেন।

>

অনেক এলাকায় বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে
সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়িতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।

করোনার এই দুর্যোগের মধ্যেও আমাদের দেশে টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে। অনেক এলাকায় বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়িতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর্মী যেন মাস্ক পরা থাকেন এবং টিকা দেওয়ার আগে তিনি যেন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আপনার এলাকার টিকাদান কেন্দ্র কত দূরে কিংবা সেখানে লোকসমাগম কেমন হয়, সেটি বিবেচনা করেও টিকাকেন্দ্রে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন। অর্থাৎ টিকাদান কেন্দ্র যদি অনেক দূরে হয় এবং সেখানে গেলে যদি করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, তবে সেখানে না যাওয়াই ভালো।

লেখক: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ