করোনা নিয়ে রসিকতা

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

করোনাভাইরাসের দিনগুলোয় রসিকতা থেমে নেই। মানুষকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকতে, মানুষ বেরিয়ে পড়ছে আনন্দের সঙ্গে। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে, মানুষ তা থোড়াই কেয়ার করছে। ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য ফেরিঘাটগুলোয় যে ভিড় হচ্ছে, তা অকল্পনীয়। বাজারঘাটগুলোয় মানুষের ভিড়ে উঁকি দেওয়াই দায়।

এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়। কেন যেন মনে হচ্ছে, সারা বিশ্বেই মানুষ খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে। মানুষের জীবন যখন থেকে সংখ্যা হয়ে গেছে কেবল, তখন থেকেই সাধারণ মানুষ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

সে যা হোক, কয়েক দিন আগে করোনাকালে রসিকতা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। হাস্যরস যেমন ছিল, তেমনি তাতে লুকিয়ে ছিল কষ্টও। কেউ তা থেকে নিংড়ে নিয়েছেন আনন্দটুকু, কেউ নিয়েছেন কষ্টটাও। আবার কেউ কেউ তা দিয়ে মনের ভেতর রচনা করেছেন আনন্দ-বেদনার কাব্য।

সে রকমই আরও কিছু কৌতুক এখানে হাজির করছি। এই বিপদ তো একসময় কেটে যাবে ঠিকই, কিন্তু এ রকম একটা সময় যে পার করেছে পৃথিবী, তার একটা ছাপ তো থেকে যাবে এই রসিকতাগুলোয়, এটুকুই ভরসা। বলাবাহুল্য, রুশ দেশের নানা পথে হেঁটে হেঁটে জোগাড় হয়েছে এগুলো।

১.
ইস, এ সময় যদি জাতীয় নির্বাচন হতো, তাহলে এরই মধ্যে সব কটি রাজনৈতিক দল পিপিই, মাস্ক আর গ্লাভস দিয়ে জনগণকে সয়লাব করে দিত!

২.
যদি স্কুলগুলো আরও অনেক দিন বন্ধ থাকে, তাহলে বিজ্ঞানীদের আগে বাবা-মায়েরাই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলবেন!

৩.
মস্কো সরকার মাস্কের কারখানা কিনে নিয়েছে। এর মানে বুঝতে পারছেন? করোনা থাকুক আর না থাকুক, মস্কোবাসীকে কম করে হলেও আরও এক বছর মাস্ক পরেই চলাচল করতে হবে!

৪.
কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মেনে না চলায় মস্কোর ব্যাংকগুলোয় জমা হয়েছে ৫ কোটি রুবল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, যদি গৃহবন্দিত্বের আইন বলবৎ থাকে, তাহলে মাস শেষে রুবল স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

৫.
আজ থেকে ওষুধের দোকানে মাস্ক ছাড়া ঢোকা নিষেধ। এমনকি মাস্ক কেনার জন্যও বিনা মাস্কে ফার্মেসিতে ঢোকা যাবে না। তার মানে প্রথম মাস্কটি আসলে অর্জন করতে হবে রাজপথে অন্যের মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে…

৬.
মস্কোর মেয়র অফিস থেকে বলা হয়েছে, অফিস খোলার অন্তত এক সপ্তাহ আগেই চুল কাটার সেলুন আর বিউটি পারলারগুলো খুলে দিতে হবে। নইলে এ অবস্থায় অফিসে এসে একে অন্যের চেহারা দেখে যে কেউ ভয়ে হার্টফেল করতে পারে।

৭.
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখনো স্থির করে বলতে পারেননি, টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় কি ছড়ায় না। কিন্তু আমাদের অফিস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত সতর্কতার কারণে আমাদের বেতন দেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।

৮.
লকডাউন কিছুটা শিথিল করতেই দাঁতের ডাক্তারের কাছে ফোন, ‘আমি কি ডাক্তারের কাছে নাম লেখাতে পারি?’
‘সংক্রমিত হতে নাকি কাউকে সংক্রমিত করতে?’ ডাক্তারের উত্তর।

৯.
রাশিয়ায় অফিশিয়াল ছুটির দিন শেষ হয়েছে, কিন্তু কাজের দিন এখনো শুরু হয়নি।

১০.
‘জিনা, আর দোকানে যাওয়ার দরকার নেই।’
‘আমি ঠিকই জানতাম, করোনাভাইরাসের কারণে দোকানের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে! ঠিক বলেছি?’
‘ভুল বলেছ। আমাদের চাকরি গেছে আর টাকাও শেষ হয়ে গেছে।’

১১.
আচ্ছা, আপনাদের মনে আছে তো, কে কোথায় চাকরি করতেন?

১২.
২০০০ সাল: ২০২০ সালে উড়ন্ত গাড়ি চলবে পৃথিবীতে।
২০২০: প্লেনগুলোও ওড়া বন্ধ করে দিয়েছে!

১৩.
টেলিভিশনেও যদি কাউকে কাশতে দেখি এখন, তাহলে তাড়াতাড়ি মাস্ক পরে নিই।

১৪.
সারা পৃথিবী লাসভেগাসে পরিণত হয়েছে। লাসভেগাসের মতোই কেউ কোনো কাজ করে না। সবাই টাকা শেষ করছে, দিনের যেকোনো সময় পান করছে। কেউই জানে না, আজ কী বার কিংবা কত তারিখ!

১৫.
‘মস্কোতে সব নিয়মনীতি মেনে কে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী রয়েছে?’
‘একমাত্র লেনিন।’

১৬.
বিচারক: তাহলে আপনি স্বীকার করছেন না, আপনি পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে ছিলেন?
আসামি: একেবারেই না, মহামান্য আদালত। আমি শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিলাম।

১৭.
‘আমার সোনামণি বিড়াল ভাস্কা, তুইও কি ভাবছিস, ঘরে বসে বসে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে?’
‘আমাকে বিড়াল বলছ কেন, আমি তো আয়রন!’ বলল বিড়ালটি।

১৮.
আমেরিকা, জার্মানি আর ব্রিটেন সরকার বলছে তাদের জনগণকে:
‘বাড়িতে থাকুন।’
জনগণ: ‘তাহলে বাঁচব কী করে?’
সরকার: ‘বাড়িতে থাকুন, আমরা আপনার টাকার ব্যবস্থা করব।’

রুশ সরকার বলছে তাদের জনগণকে:
‘বাড়িতে থাকুন।’
জনগণ: ‘তাহলে বাঁচব কী করে?’
সরকার: ‘বাড়িতে থাকুন, নইলে আপনার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করব।’

১৯.
পৃথিবীতে এখন বিপ্লববিরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে।
১. ওপর মহল চাইছে সবকিছু বদলে যাক।
২. সাধারণ মানুষ চায় এখনকার মতোই থাকতে।
৩. জনগণের মধ্যে সোচ্চার হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

২০.
‘বাবা, আমাদের কি আবর্জনা জমেছে?’
‘জমেছে। তুই থালবাটি ধুতে থাক।’
‘বাবা!’
‘এরপর তুই ঘর মুছবি।’
‘বাবা!’
‘আবর্জনা ফেলতে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। আগে বাড়ির কাজগুলো কর। পরে ভেবে দেখা যাবে!’

২১.
কাজে যাচ্ছি। কোয়ারেন্টিন চলছে। রাস্তায় থামাল পুলিশ। রাস্তার দুই ধারেই কাগজপত্র পরীক্ষা চলছে। আমার কাগজপত্রও পরীক্ষা করে দেখল একজন। তারপর সব ফেরত দিয়ে বলল, ‘সব ঠিক আছে। যাত্রা শুভ হোক!’
কাগজপত্র হাতে নিয়ে আমি তো অবাক! আমি তো আমার বউয়ের গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। এটা বউয়ের লাল রঙের গাড়িও নয়। কাগজগুলোতেও বউয়ের নাম লেখা!
করোনা বুঝি পরীক্ষার ধরনও বদলে দিয়েছে!

২২.
‘আপনি কি জানেন, ঘরে বন্দী থাকতে একটুও একঘেয়ে লাগে না। এই যেমন ধরুন, এক কিলোগ্রাম চালের প্যাকেটের একটায় দেখলাম ২৭৮৯টি চাল, অন্যটায় দেখলাম, ২৮০৪টি!

আজ এ পর্যন্তই। করোনাকাল প্রলম্বিত হচ্ছে আর করোনাকালে মানুষ নিয়ে রসিকতাও বেড়ে চলেছে। মানুষ তার মনটাকে সজীব রাখতে চায়। রসিকতার মাধ্যমে সে সজীবতা এলে ক্ষতি কী?