আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে

সেদিন ছিল প্রবারণা পূর্ণিমা। আকাশজুড়ে শুধুই চাঁদের আলো। চারপাশটা আলোয় ভেসে যাচ্ছে। চাঁদের এত আলো আমি কি কখনো দেখেছি? পূর্ণিমা কি কখনো এভাবে অনুভব করেছি? শান্ত নদী, দুই পাশে গভীর অরণ্য, জোছনা, দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর, রাতজাগা পশুপাখিদের অপরিচিত কোলাহল—সবকিছু মিলে এমন পরিবেশ আমি বা আমরা কখনো অনুভব করিনি।
সুন্দরবন দেখতে গিয়ে এ রকম দুটি রাত পাওয়ার পর মনে হলো, শুধু এই জোছনা রাতকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমরা আবার আসব। আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে পাশে নিয়ে আবার এই আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে ফিরে আসতেই হবে।
আসলে সুন্দরবনের সৌন্দর্য একেক সময় একেক রকম। সূর্যোদয়ের সময় অজানা সব পাখির ডাক, তাদের ওড়াউড়ি, আঁধার কেটে বেরিয়ে আসা দু-একটি নৌকা, শিশিরভেজা জঙ্গল মনের সব দুঃখ ও মলিনতা ঘুচিয়ে দেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ বেড়ে যায় বলে অনেকেই মনে করেন শীতকালে এখানে আসা উচিত। তাহলে সুন্দরী কেওড়ার বনে সারা দিনের ঘোরাঘুরিতে ক্লান্তি আসে না। বিদ্যুতের সরবরাহ অপর্যাপ্ত বলে নৌকায়ও গরমকালে বেশ কষ্ট হয়। তবে অভিযানপ্রিয় দল রয়েছে, যাদের কাছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, রোদ ও কাদা কোনো সমস্যাই নয়। সুন্দরবনকে দেখাই তাদের লক্ষ্য। বনের যত ভেতরে যাওয়া যাবে, তত বেশি পশুপাখির দেখা পাওয়া যাবে। যাঁরা গভীরভাবে সুন্দরবনকে দেখতে চান, তাঁদের সঙ্গে নিতে হবে দুরবিন, হাঁটার জন্য ভালো জুতা, কাটাছেঁড়ার মলম, ব্যান্ডেজ, ছাতা, সানগ্লাস এবং সর্বোপরি একটি ভালো ক্যামেরা।
বিকেলটাও সকালের মতো অপূর্ব। তখন পাখিদের ঘরে ফেরার পালা। চিল, মাছরাঙা, ঘুঘু, মদনটাক, টিয়া, সারস ও বকেদের দল নীড়ে ফেরার আগে শেষবার খাবারের খোঁজ করছে। এ সময় চোখে পড়তে পারে ভোঁদড়, কাঠবিড়ালি, হরিণ। সারা দিনের মধ্যে কপাল ভালো থাকলে একবার কুমিরকে রোদ পোহাতে দেখা যেতে পারে।
সুন্দরবন দেখব বলে আমাদের ১৫ জনের যে দলটি আটঘাট বেঁধে বেরিয়েছিলাম, আমরা ঠিক সে রকম অভিযাত্রী দল নই বলে এমন একটি লঞ্চ ভাড়া করেছিলাম, যেখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ছিল, থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা ছিল। যাঁরা যেভাবে যেতে চান, সেভাবেই সুন্দরবনে যেতে পারেন—বড় দল নিয়ে, ছোট দলে নিজেদের মতো করে, অথবা একা একা অন্যদের সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে। খরচটাও হবে সেই অনুপাতে।
সুন্দরবন না দেখার কষ্ট ও লজ্জা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল। আমাদের দেশের এত বড় একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, এত বিশাল যার অস্তিত্ব, অপরূপ যার সৌন্দর্য—সেটা কি একবার না দেখলে চলে? কিন্তু একবার দেখার পর এখন বারবার দেখতে মন চাইছে। এ দেখায় কোনো ক্লান্তি নেই। তবে সেদিনও হতে হবে পূর্ণিমার রাত।
যেভাবে যাবেন
বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুন্দরবন যাওয়াই ভালো। দেখে নিন, বন বিভাগের যথাযথ অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না।