আপনারও কি এ অভ্যাসগুলো আছে? থাকলে এড়িয়ে চলুন

হাট–বাজারে মাস্ক ছাড়া হাঁচি দেওয়ার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন। ছবিটি প্রতীকী
ছবি: সুমন ইউসুফ

নিত্যদিনের জীবনে আমরা মনের অজান্তে কত কিছুই না করে ফেলি। কেউ হয়তো স্যান্ডেল ঘষটে শব্দ করে হাঁটছেন, কেউ আবার মুখে হাত দিচ্ছেন খানিক পরপর। এগুলোর জন্য কারও হয়তো জেল-জরিমানা হবে না। কিন্তু এমন আচরণ অন্যের বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। আবার কিছু অভ্যাস কেবল অপ্রীতিকরই নয়, অস্বাস্থ্যকরও বটে। সভ্য সমাজের সদস্য হিসেবে আমাদের কখনোই এমন আচরণ করা উচিত নয়। এমন কয়েকটি আচরণ বিষয়ে সচেতন করতেই এই লেখা।

১. পথে বেরোলে দেখা যায়, অনেকেই থুতু ফেলছেন সড়কে-ফুটপাতে। ‘ওয়াক থু’ কিংবা ‘খক খক’ শব্দ করে থুতু ফেলাটা খুবই বিরক্তিকর ও কেতাবিরুদ্ধ। তা ছাড়া একজন মানুষের থুতু যে অন্য মানুষের জন্য রোগের উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা তো কমবেশি সবারই জানা। করোনাভাইরাস, যক্ষ্মার জীবাণুসহ নানান জীবাণু ছড়াতে পারে সেখানে-সেখানে থুতু ফেলার কারণে। ব্যবহৃত টিস্যু বা রুমালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এগুলো যেখানে-সেখানে রেখে দেওয়া অনুচিত। এতেও অপরের বিরক্তির উদ্রেক হতে পারে, আর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছেই।

২. মুখে, নাকে বা চোখে হাত দেওয়ার অভ্যাস নিজের জন্যই অস্বাস্থ্যকর। করোনা মহামারির পর আমরা এ সত্যকে নতুন করে জেনেছি। আবার নিজের মুখে, নাকে বা চোখে হাত দেওয়ার পর সেই হাতে কোনো বস্তু স্পর্শ করাও অনুচিত। মনে রাখবেন ওই বস্তুটি এরপর অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারেন এবং এভাবে আপনার শরীর থেকে বস্তুতে লেগে যাওয়া জীবাণু তাঁর শরীরে চলে যেতে পারে। তা ছাড়া এভাবে মুখে বা নাকে হাত দেওয়ার অভ্যাস দৃষ্টিকটু।

যখন তখন নাক মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
ছবি: অধুনা

৩. কারও কারও আবার নখ কামড়ানো কিংবা নাক খোঁটার মতো বদভ্যাসও থাকে। আর যাঁর নখ কামড়ানোর অভ্যাস থাকে, তাঁর নখের ময়লা নিজের পেটেই যেতে পারে। নখের ময়লা মুখ থেকে পেটে গিয়ে দ্রুত অসুস্থ করতে ফেলতে পারে আপনাকে। নাক খোঁটার ফলে নাক থেকে রক্তপাতও হতে পারে।

৪. কথাবার্তা, আলাপ-পরিচয়ের সময়েও কিছু রীতি অনুসরণীয়। যেকোনো জায়গায় উচ্চ স্বরে কথা বলা যায় না-এটা ভুলে যাওয়া যাবে না। সভা-সেমিনার, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, লাইব্রেরি, গণপরিবহন বা লিফটের মতো জায়গায় কখনোই উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। প্রথম পরিচয় হলো এমন মানুষের সঙ্গে কিংবা খুব নিকটজন হয়ে ওঠেনি, এমন কাউকে চট করে তুমি বলে ফেলা উচিত নয় (এমনকি তিনি বয়সে ছোট হলেও না)। এমন মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপচারিতা করাটাও সমীচীন নয়। বিয়ে করেননি কেন বা আপনার বাচ্চা কয়টা-এ ধরনের কথা কোনোমতেই বলা উচিত নয়। চেনা-অচেনা কোনো মানুষকেই তাঁর ওজন প্রসঙ্গে বলতে নেই। এ ধরনের কথা হয়তো আপনার কাছে সামান্য মজা বা ক্ষণিকের আনন্দ, কিন্তু এই একটি কথাই অন্যের হৃদয়ে আঘাত দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পোশাকের দাম, জুতার ব্র্যান্ড এগুলো নিয়েও আলাপ করা ভালো নয়।

হাঁটাচলারও আদবকেতা আছে। মডেল: বাপ্পি ও মাহফুজ
ছবি: অধুনা

৫. হাঁটাচলা এবং বসারও রয়েছে আদবকেতা। হাঁটার সময় জুতা জোড়া চটাস চটাস শব্দ করবে কিংবা পা ঘষার শব্দ অন্যের কর্ণগোচর হবে-এমনটাও কিন্তু কেতাবিরুদ্ধ। হাঁটার সময় অন্যের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আপনি ধীরে হাঁটলে আপনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতো পথটুকু ছেড়ে হাঁটুন, তাহলে যাঁর তাড়া রয়েছে, তিনি আগে যেতে পারবেন। গুরুজনের সামনে পায়ের ওপর পা তুলে বসাটা এ দেশের রীতি অনুযায়ী অভদ্রতা। কোনো স্থানে বসার সময় নারী এবং গুরুজনদের আগে বসতে বলাটা সুন্দর মানসিকতার পরিচায়ক।

এমন ছোটখাটো বিষয় হয়তো কোথাও লেখা থাকে না। এগুলোর অভ্যাস করতে হয় পরিবার থেকে। তাই ছোটবেলা থেকে পরিবারের বড়রা ছোটদের এই বিষয়গুলো শেখাতে পারলে সেটা তারা অভ্যাসে পরিণত করবে। আর বড়রা একটু সচেতন থাকলেই এড়িয়ে চলতে পারবেন এই বদভ্যাসগুলো।