
বিড়ম্বনা বটে। মশা যখন চারপাশে ভনভন করে, তখন বিড়ম্বনার মধ্যেই পড়তে হয়। মশার উপদ্রব এখনই বেড়ে গেছে। বিকেল হতে না–হতেই রাজ্যের মশা ঘরে এসে জমা হয়। শুরু হয় উপদ্রব। সেই সঙ্গে নানা রোগের আশঙ্কা তো রয়েছেই। শেষমেশ মশারি টানিয়ে নেওয়া ছাড়া যেন আর কোনো পথ থাকে না। কামান দেগে মশা মারার দরকার নেই। মশা দমনে মশারি, স্প্রে ছাড়াও বর্তমানে মশা মারার ব্যাট, ভ্যাপোরাইজিং মেশিন এবং বিভিন্ন ধরনের লোশন পাওয়া যাচ্ছে।
মশা মারার নানা উপায় হাতের নাগালেই। কিন্তু জেনে নেওয়া প্রয়োজন উপায়গুলো কতটা কার্যকর আর স্বাস্থ্যসম্মত।
মশা মারবার বিভিন্ন সরঞ্জাম
বাজারে মশা তাড়াবার বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে। সব বাজারেই পাওয়া যায় এসব জিনিস—জানালেন রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের বিক্রেতা জুয়েল মিয়া।
রিচার্জেবল ব্যাট
এলইডি বাতিসহ মশা মারার ব্যাট রয়েছে। রিচার্জেবল এসব ব্যাটের সুবিধা হলো টানা ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অনায়াসে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। বিভিন্ন রং ও আকৃতির মধ্য থেকে আপনি সুবিধামতো বেছে নিতে পারেন এই ব্যাট।
ভ্যাপোরাইজিং মেশিন

রিচার্জেবল ব্যাট নিয়ে না হয় মশার হাত থেকে রেহাই পেলেন। কিন্তু তাই বলে তো আর সব সময় এই ব্যাট ব্যবহার করা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন, ঘুম কিংবা পড়ার সময়। তাই এ ক্ষেত্রে সহজ উপায় হলো ভ্যাপোরাইজিং মেশিন। বিদ্যুচ্চালিত এই যন্ত্র স্বাস্থ্যসম্মত। এর সুবিধাও অনেক। এমনটাই জানালেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারও শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি বা হাঁপানির সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে ভ্যাপোরাইজিং মেশিন ব্যবহার করা প্রয়োজন।’ কয়েল কিংবা স্প্রের চেয়ে এর কার্যকারিতাও অনেক বেশি। শুধু ঘর নয়, চাইলে যেকোনো স্থানেই এটি ব্যবহার করা যায়।
লোশন
ঘর ছাড়া বাইরেও রয়েছে মশার উপদ্রব। এই মৌসুমে পিকনিক, শহরের বাইরে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া হয়। সে জন্যই মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায়টা হলো বিভিন্ন ধরনের লোশন বা ক্রিম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদা ফাতেমা বলেন, ‘এ ধরনের ক্রিমের গায়েই লেবেলিং করা থাকে। সেগুলো জেনে নিয়েই ব্যবহার করা উচিত’। যেমন কিছু লোশন রয়েছে যা শিশুদের ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা ব্যবহার করতে পারেন। আবার এটি কতক্ষণ কাজ করবে, শরীরের কোনো অংশে ব্যবহার করা যাবে, তাই সবকিছু জেনে নিয়েই ব্যবহার করা উচিত।
সাধারণত, শিশুসহ যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্যই বিভিন্ন লোশন ও ক্রিম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তাই কেনার সময় ঠিকমতো জেনে নিন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মশা প্রতিরোধক লোশন, ক্রিম এবং স্প্রে পাওয়া যাবে ওষুধের দোকানে।
প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা

এ তো গেল মশা তাড়াবার যত উপায়। কিন্তু সেই সঙ্গে নেওয়া চাই প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থাও। সেলিনা আক্তার জানান কিছু টিপস্
l পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। ঘরের প্রতিটি কোণ, গাছের টব, প্লাস্টিক বা মাটির ভাঙা কোনো সরঞ্জাম এবং বাগানের আগাছা পরিষ্কার রাখা উচিত। কেননা, এখানে শুধু মশা নয়, সেই সঙ্গে বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব হতে পারে।
l বারান্দা কিংবা ছাদে রাখা গাছের গোড়ায় কীটনাশক ওষুধ দিয়ে রাখা ভালো। যাতে কোনোমতেই পানি জমে স্যাঁতসেঁতে না হয়ে থাকে।
l ঘরের দরজা-জানালা হওয়া চাই যথেষ্ট প্রশস্ত। যাতে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে স্যাঁতসেঁতে ভাব বজায় থাকে। তাই রোদ যাতে ঘরে এসে পড়ে, সেই অনুযায়ী জানালার মাপ ও কাচ হওয়া প্রয়োজন।
l পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হালকা রং বেছে নেওয়াই ভালো। ভারী পর্দা হলে দুদিন পর স্প্রে করে নিন।
l জানালায় নেট বা জাল লাগাতে পারেন। কিন্তু নেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
যেখানে যেমন
সবার আগে বলা যাক মশারি নিয়ে। যেকোনো বাজারেই আজকাল বিভিন্ন ধরনের মশারি পাওয়া যায়। নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নীলক্ষেত, মৌচাকসহ প্রতিটি মার্কেটেই পেয়ে যাবেন। তবে দামে রয়েছে তারতম্য। যেমন সিঙ্গেল মশারি পাবেন ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ডবল ও সেমি ডবল মশারি পাবেন ২৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ম্যাজিক মশারি পাবেন ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
শিশুদের মশারির দাম পড়বে ২৫০ থেকে ১২০০ টাকা। বিভিন্ন কার্টুন, ছবি ছাপা মশারি পাবেন বাজারে।
ত্বকে লাগাবার বিভিন্ন ক্রিম, লোশন পাওয়া যাবে ফার্মেসিসহ বিভিন্ন শপিং মলে। যেখান থেকেই কেনা হোক না কেন, আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন। লোশন, ক্রিমের দাম পড়বে ১৫০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে। ভ্যাপোরাইজিং মেশিনের দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা।
খেয়াল করুন
l মশা নিরোধক যেকোনো ক্রিম বা স্প্রে কেনার সময় অবশ্যই এটি ব্যবহারের নিয়মাবলি পড়ে নিন। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিন। ব্যবহারের পর কোনো সমস্যা দেখা গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শিশুদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই পরামর্শ নিন।
l শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি বা হাঁপানির সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা ভ্যাপোরাইজিং মেশিন ব্যবহার করুন। স্প্রে এ ক্ষেত্রে ব্যবহার না করাই ভালো।
l ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ভ্যাপোরাইজিং মেশিন বন্ধ করুন।
l মশার ওষুধ স্প্রে করার সময়ে নাকে রুমাল বা কাপড় পেঁচিয়ে নিন। স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে প্রবেশ না করে কিছুক্ষণ দরজা-জানালা লাগিয়ে রাখুন।