
আমার মামার বাড়ি ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। বাড়িটার প্রতি অদ্ভুত একটা টান ছিল। তার অবশ্য আলাদা একটা কারণ আছে। ওই বাড়িতে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হতো। হয়তো গান শোনা হচ্ছে বা গল্প-উপন্যাস নিয়ে কথা হচ্ছে। যেকোনো অনুষ্ঠানে বাড়িটা মেতে থাকত। মামাবাড়িতে একটা গ্রামোফোন ছিল। সেই যন্ত্রটায় গান শোনার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করতাম। আমার ছেলেবেলা কেটেছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর ও সুমন কল্যাণপুরের গান শুনে।
সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুনতে শুরু করলাম কিশোর কুমার আর শচীন দেববর্মনের গান। এই দুজন শিল্পী আমাকে একেবারে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
ছেলেবেলায় শোনা সেই গানগুলো এখনো মনের মধ্যে কোনো এক সুরের দেশে নিয়ে যায়। এখনো যখন সেই গানগুলো শুনি, শৈশবে ফিরে যাই। নস্টালজিক হয়ে পড়ি। সেই গানগুলো আজও আমাকে একই রকম মুগ্ধ করে রেখেছে।
একটি গান খুব প্রিয় ছিল আমার। অমল মুখোপাধ্যায়ের ‘চুপ চুপ লক্ষ্মীটি, শুনবে যদি গল্পটি/ এক যে ছিল তোমার মতো ছোট্ট রাজকুমার।’ গানটা শুনলেই মন ভালো হয়ে যেত। নব্বই দশকে এসে প্রিয় শিল্পীদের তালিকায় পিন্টুু ভট্টাচার্যের নামও যোগ হয়েছে।
যে গানের সুর ভালো লাগে, সে গানই শুনি। আর শুনতে পছন্দ করি রবীন্দ্রসংগীত। মন উজাড় করে শুনি। আর সেটা যদি হয় প্রিয় গায়কের কণ্ঠে, তবে তো কথাই নেই। পঙ্কজ কুমার মল্লিক, কণিকা মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত দুর্দান্ত লাগে।
শ্রীকান্ত আচার্যের গান খুব ভালো লাগে। বেশ দরদি কণ্ঠে গায়। বলতে বলতে মনে এল আরেকজন শিল্পীর কথা। তিনি বিক্রম সিং। তিনি এত চমৎকারভাবে গান, মনে হয় গান গাইবার ছলে যেন আকুল হয়ে কারও প্রার্থনা করছেন।

মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি সাবিনা ইয়াসমীনের গান। সত্যিকার অর্থেই তিনি কোকিলকণ্ঠী। শৈশব থেকেই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন আব্বাস উদ্দিন ও আবদুল আলীম।
ভালো লাগে রুনা লায়লা, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, ফেরদৌসী রহমান, কনকচাঁপা, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ ও জেমসের গান। গান আমার প্রতিদিনকার সঙ্গী। প্রতিদিন গান না শুনলে আমার মনে হয় দিনটাই বৃথা গেল। দুপুরের পরই বেশির ভাগ সময় গান শুনি।
ছেলেবেলায় গানের সঙ্গে যেন ঘুমের একটা যোগ ছিল। তখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে গান শুনতাম। রেডিও বা চেঞ্জার বাজত। গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তাম। এখন প্রতিদিন ভোরবেলায় গান শুনি। গভীর রাতেও গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে যাই।
গত অনেকগুলো বছর রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। প্রায় প্রতিদিন তাঁর কোনো না কোনো গান শুনি। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা তাঁর অসাধারণ কণ্ঠে আমাদের সময়কে আলোড়িত করেছেন। আরও বহুদিন আমি তাঁর কণ্ঠসুধায় মুগ্ধ হয়ে থাকব।
অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার