মনে হয় একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে

স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন বোনার বয়সও হয়নি—এমন একটা অপ্রত্যাশিত সময়ে বিয়ে দেওয়া হলো আমার। তখন এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ি। বড় ভাইয়ের বিয়ের পাত্রী খোঁজা হচ্ছিল। ভাইয়ের পাত্রীর বদলে, আমার জন্য পাত্রের খোঁজ নিয়ে এল সেই ঘটক। বাড়ির কেউ রাজি ছিল না প্রথমে। ভাইয়া তো প্রচণ্ড রেগে গেল। তবে যে পরিবারে বাবা অবসরে থাকেন, সে পরিবারে হাজারো অভিভাবক জন্ম নেয়। অবশেষে পরিবারের কিছু লোভাতুর লোকের কারণে বিয়েটা হয়। ধনদৌলত, অঢেল অর্থবিত্ত আছে পাত্রের। অপ্রাচুর্যে জীবন অর্থহীন—এমন কুযুক্তির কাছে বলি হয় আমার।

বদমেজাজি, অহংকারী আর সাংঘাতিক সন্দেহবাতিকগ্রস্ত একজন পুরুষ হলো আমার জীবনসঙ্গী। সেই দাপুটে অহংকারীর আগুনে জ্বলে জ্বলে আমি কাঠ থেকে কয়লা আর ভস্ম হচ্ছি। সন্দেহের জ্বলন্ত কয়লায় আমি নিজের সতীত্বের পরীক্ষা দিচ্ছি। যে অন্যায় আমি করিনি, তার জন্য আমাকেই ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। পায়ের আঙুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত আমার দোষ খুঁজে বেড়ায়। অথচ সে আমায় পাগল হয়ে বিয়ে করেছে। বাড়ির সবচেয়ে ‘সুন্দরী বউ’ হওয়ায় সবার চক্ষুশূল আমি। বাড়ির সবার চেয়ে আমার স্বামীর টাকা বেশি হওয়ায় তার টাকায় সবাই আয়েশ করে, যার ফলে দুশমনেরও অভাব নেই।

ভাশুর-জায়েরা সুযোগ পেলেই স্বামীর কাছে এটা-সেটা বলে আমার নামে। স্বামীও বিনা যাচাইয়ে আমাকে দোষারোপ করে তেড়ে আসে। মানসিকভাবে অত্যন্ত কুৎসিত স্বামী নামের পুরুষটির মনগড়া নোংরা কাহিনি আর অভিযোগ আমাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। তার হিংসাত্মক, আক্রমণাত্মক আচরণ আমার সংসারটাকে ভেঙে সমাপ্তির পথে নিয়ে যায় প্রায়ই। পরম মমতায় গড়া সংসারটাকে আমি ভাঙনের পথ থেকে ছিনিয়ে আনি এই ভেবে—এক বিয়েতে যার সুখ হয় না, সাত বিয়েতেও সে পোড়াকপালী।

পরিবারের সম্মান আর সমাজ ও সামাজিকতার দায়ভার নিয়ে, দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ আর সুন্দর জীবনের কথা ভেবে আজও আমি বয়ে চলেছি এই জীবন। ১৬টি বছর ধরে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার জন্য না হোক, দুটি সন্তানের জন্য। আজ আমি ভীষণভাবে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাকি পথটা আমাকে একলা শুধু যুদ্ধ করে কাটাতে হবে। জীবনের প্রথম ধাপটা যখন ‘বেঁচে থাকার’ যুদ্ধ দিয়ে শুরু করেছি, গন্তব্যের শেষটা ‘টিকে থাকার’ সংকল্পেও যুদ্ধ করব। সাংসারিক যুদ্ধে এ লড়াই শুধু বেঁচে থাকার নয়, টিকে থাকারও।

সোনিয়া, ঢাকা।