
জীবনে এক দিনের জন্যও বেকার থাকতে চাননি। তাই কিশোর বয়স থেকেই টিউশনি করে নিজের পড়াশোনাসহ যাবতীয় চাহিদা মিটিয়েছেন। মাধ্যমিক পাসের পর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ভাবলেন, আর পরের চাকরি নয়, নিজেই এবার নিজের ভবিষ্যৎ লিখবেন। যেই কথা সেই কাজ। নারী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে নানামুখী ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন।
নানা ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হিসেবে পাস করেছেন। ২০১২ সালে সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় চালু করেন ‘আধুনিক জুট হ্যান্ডিক্রাফট অ্যান্ড টেইলার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন পাট আমদানিকারকদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বল্পদিনে কেবল ইচ্ছা ও অধ্যবসায়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যত্নে আগলে রেখে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার অন্তরালের মানুষটি হচ্ছেন রিংকু রানী দে।
রিংকুর প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানটিতে স্কুল ব্যাগ, ফোল্ডার, হট কেরিয়ার ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, পারস ব্যাগ, মানিব্যাগসহ নানা ধরনের পাটজাত দ্রব্য তৈরি করা হয়। পাইকারি ও খুচরা সব ধরনের কেনাবেচা এখানে হয়ে থাকে। তাঁর নিজস্ব নকশায় প্রস্তুতকৃত পাটসামগ্রী সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজার ও বাণিজ্য মেলায় বিক্রি হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে এখন ১০ জন নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব নারীর অধিকাংশই স্বামী-পরিত্যক্তা ও বেকার ছিলেন।

রিংকু জানান, ভবিষ্যতে হাতে নির্মিত পাটজাত দ্রব্যের একটি সুবিশাল হ্যান্ডিক্রাফটের দোকান চালু করার স্বপ্ন রয়েছে। সেখানে অন্তত ১০০ জন নারীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চান এবং তাঁদের মাধ্যমে নির্মিতব্য সামগ্রীগুলো দেশ-বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে চান। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি আরও গুছিয়ে নিয়ে তিনি ব্যাংকঋণ পাওয়ার প্রচেষ্টা চালাবেন। তাঁর পথচলায় সিলেট উইমেন বিজনেস ফোরামের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় ব্যাপক সহযোগিতা করছেন বলে জানালেন তিনি।
রিংকু রানী দে বলেন, ‘দেশ-বিদেশে পাটজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সুবিধাটুকু নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজের বিস্তৃতি ঘটাতে চাই। এ লক্ষ্যেই এখন কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি করা সামগ্রী বেচাকেনার জন্য সুনির্দিষ্ট বাজার বা বিপণিবিতান থাকলে অনেক সুবিধা হতো। নারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রায়ই পাটজাতসামগ্রী তৈরি বিষয়ক কর্মশালার আয়োজনও করে থাকি।’