রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা...

৮ নভেম্বর। বেলা তিনটা। নগরের সিআরবিতে ছবি তোলায় ব্যস্ত উচ্ছল এক ‘তরুণী’। খোলা চুল। পরনে টপস আর জিনস। চোখে সানগ্লাস। হাতে বাহারি ব্রেসলেট। কয়েকজন দর্শনার্থীর ইতিউতি—চেনা চেনা লাগে, আবার অচেনা। ঠিক যেন কোথায় দেখেছি। এবার ভ্রম ভাঙল। আরে এ তো ‘ফাটা কেষ্টর বউ’! বলেই হই হই করে ছুটল কাছে। একেবারে কাছ থেকে দর্শন। অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এই দেখা। অল্প কিছু সময় কাটিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলেন সেই ‘তরুণী’। তিনি আর কেউ নন টালিগঞ্জের জনপ্রিয় নায়িকা দেবশ্রী রায়। পঞ্চাশে এসেও চলাফেরা আর চোখেমুখে এখনো তরুণীর উচ্ছলতা রয়েই গেল।
ফাটা কেষ্ট সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন দেবশ্রী রায়। সিনেমাটি দুই বাংলায় সমান সাড়া জাগায়। সাধারণ দর্শকদের মনে এখনো গেঁথে আছে সিনেমাটির কাহিনি।
সে যাক, ফিরে আসি দেবশ্রীর কথায়। চট্টগ্রাম এসেছিলেন ৪ নভেম্বর। বাংলাদেশের ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও কলকাতার রেশমি পিকচার্সের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য ছবি হঠাৎ দেখা-এর শুটিংয়ের জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা অবলম্বনে ছবিটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করছেন রেশমি মিত্র। দেবশ্রীর সঙ্গে অভিনয় করছেন নব্বই দশকের বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। চট্টগ্রামে শুটিং হয়েছে চার দিন। শুটিং চলে রেলস্টেশন ও সিআরবিতে।
শুটিংয়ে দেখা যায়, ঘোড়ার গাড়িতে করে স্টেশনে এলেন মানসী (দেবশ্রী)। এরপর উঠলেন ট্রেনে। সেখানে হঠাৎ দেখা ছোটবেলার বন্ধু অমিতের (ইলিয়াস কাঞ্চন) সঙ্গে। ট্রেনের কামরায় মানসী আর অমিত। পাশাপাশি বসা। অমিতের চুলে পাক ধরছে। মুখে দাড়ি। আর কালো রেশমি শাড়িতে মানসী। যেন অবিকল রবীন্দ্রনাথের হঠাৎ দেখার নায়িকা—‘রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা/ ভাবিনি সম্ভব হবে কোনো দিন।/ আগে ওকে বারবার দেখেছি/ লাল রঙের শাড়িতে। ডালিম ফুলের মতো রাঙা/ আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়...’ কবিতার পরতে পরতে ভালোবাসার টান। ছবিতেও কি থাকবে সেই আবেগজড়ানো ভালোবাসার সংলাপ? তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী পঁচিশে বৈশাখ পর্যন্ত। ছবিটি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রামে প্রথম আসা। কেমন লাগছে? দেবশ্রী জানালেন, ‘আমার মায়ের বাড়ি ঈশ্বরদীতে। দাদু থাকতেন চট্টগ্রামে। মায়ের কাছে চট্টগ্রামের কথা অনেক শুনেছি। আসার পর থেকেই মাছ আর শুঁটকি খাচ্ছি। দারুণ মজা।’
এসেই লেগে গেলেন শুটিংয়ে। টানা কাজে কোনো ফুরসত মিলল না। কিন্তু অপরূপ চট্টগ্রাম না দেখে চলে যাওয়া—ভাবতেই পারেন না দেবশ্রী। তাই যাওয়ার দিন বেরিয়ে পড়লেন। প্রথমে গেলেন ওয়ার সেমেট্রি। এরপর জেএমসেন হলে সূর্য সেনের আবক্ষ মূর্তি দেখে সাত রাস্তার মোড়ের সিআরবি। এবার সোজা পতেঙ্গার নদী-সমুদ্রের মোহনায়। দেবশ্রীর ভাষায়, এমন চমৎকার জায়গা খুব কম দেখেছেন। এত সুন্দর। মাকে দেখানোর জন্য প্রতিটি স্থানেরই ভিডিও করেছেন। পুরো বিকেলটা পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাটে কাটিয়ে সন্ধ্যায় উড়াল দেন কলকাতায়।
দেবশ্রীর অভিনয় করেছেন প্রায় তিন শ সিনেমাতে। মাঝে কিছুিদন দেখা যায়নি পর্দায়। এখন অবশ্য পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। এ ছাড়া প্রাণী রক্ষাও কাজ করছেন। দেবশ্রী রায় ফাউন্ডেশন নামে বেসরকারি একটি সংস্থাও আছে তাঁর।