একেক সময় একেক আচরণ করা বাইপোলার বসকে সামলাবেন যেভাবে

এমন বহু অফিস আছে, যেখানকার এক অলিখিত নিয়ম হলো বসের মন বুঝে চলা। কিছুদিন কাজ করলে আপনি আপনার বসের ব্যক্তিত্ব এবং পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে অনেকটা ধারণা নিশ্চয়ই পাবেন। কিন্তু বস যদি হন বাইপোলার, অর্থাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে একেক সময় একেক আচরণ করেন, তখনই পড়বেন মুশকিলে।

বস যদি কড়া হন, তাহলে ভিন্ন কথা, তবে বাইপোলার বসের সঙ্গে মানিয়ে চলা কষ্টকরছবি: প্রথম আলো

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বাইপোলার ডিজঅর্ডার একটি মানসিক সমস্যা। তবে কথ্য ভাষায় বাইপোলার বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যাঁর আচরণে প্রায়ই বৈপরীত্য দেখা যায়। হয়তো গতকালই তিনি আপনাকে অফিসের ক্যানটিনে কফি খাইয়েছেন, আজকেই আপনার সঙ্গে শুরু করলেন চিৎকার-চেঁচামেচি।

আপনি যে আজ খুব গুরুতর কোনো অপরাধের জন্য ‘দোষী’ সাব্যস্ত হয়েছেন, তা–ও কিন্তু নয়। তবু কাল আপনি যতটা সহজ হতে পেরেছেন তাঁর সঙ্গে, আজ আর ততটা পারছেন না। উল্টো তাঁর আচরণে আপনি বিরক্ত বা অপমানিত বোধ করছেন। অনেক সময় আবার পরিস্থিতি অনুযায়ী বস কথাও পাল্টে ফেলছেন। তখন বিপদে পরে যান আপনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী এবং পিএইচডি গবেষক হাজেরা খাতুন বলেন, অফিসের বসের আচরণ যদি এমন হয়, তাহলে কাজের পরিবেশ সুস্থ থাকে না। একজন কর্মীর জন্য সেখানে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং কাজের আগ্রহ কমে যেতে পারে। নিজের করণীয় নিয়ে দ্বিধায় পড়তে পারেন। এমনটাও মনে হতে পারে, চাকরিটা ছেড়ে দিলেই বোধ হয় বেঁচে যাবেন তিনি।

বস যদি কড়া হন, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে বাইপোলার বসের সঙ্গে মানিয়ে চলা কষ্টকর। এমন অবস্থায় নিজেকে সামলে চলার উপায় জেনে নেওয়া যাক হাজেরা খাতুনের কাছ থেকেই।

আরও পড়ুন

বস কি সত্যিই বাইপোলার

আপনার বসকে সত্যিই বাইপোলার তকমা দেওয়া যায় কি না, সেটি বিবেচনা করুন প্রথমে। প্রায়ই যদি কেউ দ্বিমুখী আচরণ করেন, কেবল তখনই তাঁকে বাইপোলার ভাবতে পারেন আপনি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, কখন তিনি অপমান করবেন, আর কখন আপনাকে প্রশংসায় ভাসাবেন, তা আন্দাজ করা কঠিন। মাঝেমধ্যে রেগে গেলেই বসকে বাইপোলার ধরে নেবেন না, বিশেষত রাগের যথাযথ কারণ থাকলে তো নয়ই।

বাইপোলার বসকে যেভাবে সামলাবেন

বাইপোলার বসের প্রতি সম্মান ধরে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে
ছবি: প্রথম আলো

হুটহাট মেজাজ বদলে যায়, এমন ব্যক্তির সঙ্গে চলা এমনিতেই কঠিন। তাই বাইপোলার বসের প্রতি সম্মান ধরে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আপনার যদি ওই অফিসেই ক্যারিয়ারটা সামনে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণের বিকল্প নেই।

রাগের মুহূর্তে তর্ক করবেন না। কথায়ই তো আছে, ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট’! তবে আপনি যখন জানেন, আপনিই ‘রাইট’, তখন আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। পরে সময়–সুযোগ বুঝে নিজের অবস্থান বসের কাছে পরিষ্কার করতে পারেন।

সকালে কাজের শুরুতে কিংবা বিকেলে কাজের শেষ দিকে বসের সঙ্গে কাজসংক্রান্ত আলাপ করতে পারেন, যখন তাঁর মেজাজ তুলনামূলক ঠান্ডা।

এমন বসের কাছে নিজের কাজের লিখিত প্রমাণ দেওয়া ভালো। বসের মেজাজ ভালো থাকলে তিনি যদি খোশগল্পে ডাকেন, তা কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এড়িয়ে গেলে তাঁর মেজাজ আরও বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বরং আপনি এমন ইতিবাচক মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।

আরও পড়ুন

নিজেকে যেভাবে সামলাবেন

অনেক সময় এ ধরনের বস অপ্রত্যাশিত কাজ চাপিয়ে দেন কর্মীর ওপর। অসম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেন কর্মীদের প্রতি। নির্দিষ্ট কর্মীর ওপর রাগ প্রকাশের প্রবণতাও থাকতে পারে।

তবে মনে রাখবেন, আপনার যোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেই কিন্তু আপনি অযোগ্য হয়ে যাবেন না। তাই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। মেনে নিন, ওই ব্যক্তিকে আদতে কখনোই খুশি করা সম্ভব নয়।

নিজের কাজে মনোযোগ দিন। ভুল থাকলে শুধরে নিন। মন খারাপ লাগলে নিজেকে একটু সময় দিন। কাজ থেকে খানিকটা বিরতি নিন। গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন কয়েকবার। আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এ ধরনের বস কর্মীর ওপর অপ্রত্যাশিত কাজ চাপিয়ে দেন
ছবি: প্রথম আলো

অফিসের কারও সঙ্গে এই খারাপ লাগা নিয়ে আলাপ না করাই ভালো। বসের সমালোচনা করলে তার প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। কষ্টের কথা বলতে পারেন কেবল বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু বা পরিবারের কাউকে। তবে অফিসের যন্ত্রণা ব্যক্তিগত জীবনে বয়ে আনবেন না। ‘মি টাইম’ অর্থাৎ নিজের জন্য রাখা সময় কিংবা পারিবারিক সময়ে অফিসকে হাজির করবেন না।

আরও পড়ুন