কীভাবে নেব মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
গত বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তানজিম মুনতাকা। এ বছর যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য আজ থাকল তাঁর পরামর্শ।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বেসিক অর্থাৎ মৌলিক ধারণাটা ঠিক থাকলে পড়া বেশি দিন মনে রাখতে সুবিধা হয়। প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে এলেও উত্তর করতে সমস্যা হয় না। আর এই ‘বেসিক’ তৈরির কাজটা করতে হয় উচ্চমাধ্যমিকের সময়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে আমরা যখন ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি, তখন নতুন করে বেসিক তৈরির সময় থাকে না।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো প্রস্তুতি নিতে হলে মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। মূল বই পড়ার সময় কোনো ফাঁকফোকর রাখা চলবে না। উদ্ভিদবিজ্ঞানের জন্য আবুল হাসান স্যার, প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমল স্যার, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ইসহাক স্যার ও রসায়নের জন্য হাজারী স্যারকে অনুসরণ করতে পারেন। একটি অধ্যায়ের সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়, আবার কোনো বিষয় একেবারে ফেলনাও নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লাস করে, প্রশ্নব্যাংক দেখে একটি অধ্যায়ের কোন জায়গা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, সেখান থেকে প্রশ্ন এলে কীভাবে আসে—বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, পড়তে চাইলে অনেক কিছুই পড়া যায়। কিন্তু একটু কৌশলের সঙ্গে পড়লে আমাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
মূল বই > প্রশ্নব্যাংক> অতিরিক্ত বইয়ের তথ্য> অনুশীলন
ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রথমবার পড়ার সময় এভাবে ধাপে ধাপে এগোলে নির্দিষ্ট অধ্যায়ের ওপর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বাইরের অধ্যায়গুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। কোনো কিছু বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।
অতিরিক্ত বই কতটুকু জরুরি
পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের জন্য অতিরিক্ত বইয়ের অনুশীলনী ভালোমতো পড়লেই চলে। সঙ্গে কোচিংয়ের বইগুলো দেখে নেওয়া যেতে পারে। জীববিজ্ঞানের জন্য অতিরিক্ত বইয়ের তথ্যগুলো একটু কৌশলী হয়ে পড়তে হবে। যেসব জায়গা থেকে বিগত বছরে সব সময় প্রশ্ন এসেছে, সেই জায়গাটুকু অতিরিক্ত বই থেকে পড়ে নেওয়া ভালো। যেমন উদ্ভিদবিজ্ঞানের শৈবাল ও ছত্রাক অধ্যায় থেকে বিগত দুই বছরই প্রশ্ন এসেছে। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, এই প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের ওপরই এসেছে। যেমন শৈবাল ও ছত্রাকের উপকারিতা-অপকারিতা, শৈবালের শ্রেণিবিভাগ, ছত্রাকের শ্রেণিবিভাগ ইত্যাদি। এভাবে প্রতিটি অধ্যায়ের জন্য অতিরিক্ত বইয়ের তথ্য আলাদা করে পড়তে হবে। অতিরিক্ত বইয়ের সব পড়া কখনোই উচিত নয়, এত সময় থাকেও না। অতিরিক্ত পড়তে গিয়ে মূল পড়ায় যেন ঘাটতি না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মূল বইয়ের ওপর দক্ষতা থাকলে অতিরিক্ত তথ্য নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
মূল বইয়ের অনুশীলনীর গুরুত্ব কতটুকু
মূল বই ও অতিরিক্ত বইয়ের অনুশীলনীতে আমাদের শতভাগ দক্ষতা রাখতে হবে। কেননা প্রতিবছরই রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানের ৮০-৯০ ভাগ প্রশ্ন বিভিন্ন বইয়ের অনুশীলনী থেকে চলে আসছে। সে জন্য অধ্যায়ের ভেতরে পড়ার পাশাপাশি অধ্যায় শেষের সারসংক্ষেপ ও বহুনির্বাচনী সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির গুরুত্ব
সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজি অংশটি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই দুই বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারলে বেশ ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। উচ্চমাধ্যমিকে জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন থাকায় এই তিন বিষয়ে সবার প্রায় একই ধরনের প্রস্তুতি থাকে। সবার মূল লক্ষ্য থাকে, এই তিন বিষয়ের ওপর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু অনেকেই ভুলে যায়, সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজি অংশে ২৫টি প্রশ্ন আসে এবং ভর্তি পরীক্ষায় ০.২৫ নম্বরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজিকে অবহেলা করার কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত যেকোনো বই অথবা কোচিং থেকে পাওয়া বই থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে বিগত বছরের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালো করে সমাধান করতে হবে।
প্রতিদিন কতটুকু পড়া
এই প্রশ্নের কোনো গৎবাঁধা উত্তর নেই। হাতে যেহেতু সময় কম, বিপরীতে সিলেবাস অনেক বড়, তাই লক্ষ্য থাকতে হবে—যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একবার সিলেবাস শেষ করে রিভিশন শুরু করা। একটি অধ্যায় যতবার রিভিশন দেওয়া যাবে, সে অধ্যায়ের ওপর দক্ষতা তত বাড়বে। মনে রাখতে হবে, একটি অধ্যায় একবার পড়লে যতটুকু মনে থাকে, দশবার পড়লে তার থেকে বেশি মনে থাকে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো যেন বারবার পড়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার গুরুত্ব
প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা (মক টেস্ট) দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা ভুলত্রুটিগুলো বুঝতে পারি। কোন বিষয়ে অথবা কোন অধ্যায়ের কোথায় ঘাটতি আছে, জানতে পারি। সে জন্য শুরু থেকে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পরীক্ষায় হওয়া ভুল ফেলে রাখলে চলবে না। বরং ভুলগুলো ভালো করে দাগিয়ে রাখতে হবে, সেটা ব্যাখ্যাসহ সমাধান করতে হবে। পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে সময় সম্পর্কেও একটা ভালো ধারণা হয়। ৬০ মিনিটে ১০০টি বহুনির্বাচনী যেন ঠিকভাবে দাগানো যায়, সেটার জন্য শুরু থেকেই একটু একটু করে প্রস্তুতি নিতে হবে।
বহুনির্বাচনী দাগানোর সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
১. যে বহুনির্বাচনীগুলো এক দেখাতেই পারা যায়, সেগুলো আগে দাগাতে হবে। গাণিতিক সমস্যা, না-পারাগুলো শেষে দাগাতে হবে।
২. বৃত্ত ভরাটের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সিরিয়াল ব্রেক না হয়। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে বৃত্ত ভরাট করতে হবে।
প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যে ভুলগুলো আমরা প্রায়ই করি
১. মূল বইকে অবহেলা
২ পর্যাপ্ত অনুশীলন না করা
৩. সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজিকে গুরুত্ব না দেওয়া
৪. পর্যাপ্ত মক টেস্ট না দেওয়া
৫. গুরুত্বপূর্ণ জায়গা না বুঝে একদম সব পড়া
৬. বুঝে বুঝে না পড়ে সব মুখস্থ করার চেষ্টা করা
৭. পড়াশোনা, ইবাদত ও আবশ্যিক কাজগুলো ছাড়া অন্য কিছুতে বেশি সময় দেওয়া।
সর্বোপরি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবে। মাঝপথে হতাশ হলে চলবে না। স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশি বেশি চাইতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।