হাসি কিংবা দুঃখের মতো স্বপ্নও যখন ‘ছোঁয়াচে’

মারুফা ইসহাক
ছবি: সংগৃহীত

আজকে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আমি এখন যুক্তরাষ্ট্রের যে শহরে আছি, এখানে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এমন বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা সন্ধ্যায় নস্টালজিক হওয়া যায়, স্বপ্নও দেখা যায়। নস্টালজিক হতে হতে ১০ বছর আগের এক মিটিং রুমে চলে গেলাম—টেবিলে চা, চানাচুর, আর সঙ্গে প্রায় সমবয়সী, সমমনা কিছু মানুষ। তখন আমি সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, পাশাপাশি ‘প্রথম আলো’র ফিচার পাতাগুলোয় টুকটাক লিখি। একসময় কীভাবে কীভাবে যেন আমার সব স্বপ্ন নিয়ে সেই মিটিং রুমের স্বপ্নবাজ তরুণদের দলে ভিড়ে গেলাম। আমাদের সাপ্তাহিক হুলুস্থুল দেখলেই ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়ের বাকি সবাই টের পেয়ে যেত, ‘আরে আজকে তো “স্বপ্ন নিয়ে” পাতার মিটিং আছে।’ প্রতি মিটিংয়ে পরবর্তী সংখ্যায় কী কী রাখা যেতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা হতো। তরুণদের সাফল্যের গল্প, তাঁদের সৃজনশীল চিন্তা-চেতনা-চ্যালেঞ্জ, আর সঙ্গে অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, এসব কিছু দিয়ে তৈরি হতো আমাদের সাপ্তাহিক ‘স্বপ্ন নিয়ে’।

আরও পড়ুন

ঠিক যেভাবে কারও দুঃখের কথা শুনলে দুঃখ হয়, পাশে কেউ হেসে কুটিকুটি হলে মুখ গোমড়া করে বসে থাকা যায় না, ঠিক তেমনই অন্যের স্বপ্নের কথা শুনলে নিজের ভেতরের স্বপ্নগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সত্যি বলতে কি, অন্য আরও অনেকের মতো আমারও বহুবার সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করেছে। কিন্তু যখন বিসিএসে প্রথম হওয়া কারও সম্পর্কে লিখেছি, অথবা কারও লক্ষ্যের দিকে এগোনোর সংগ্রামের কথা শুনেছি, তাঁদের ভেতরের সেই উজ্জ্বলতা আমি আমার চারপাশে টের পেয়েছি। জীবনে কি করব, কেন করব—এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। উৎসাহ-উদ্যম-অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
মাঝেমধ্যে বিখ্যাত মানুষদের সমাবর্তন বক্তব্য অনুবাদ করতাম। ইংরেজি শেখা আর ভাষান্তরের চর্চাটা তো ভালোই হতো, সেই সঙ্গে বক্তব্যের অনেক কথাই মাথায় ঘুরত। অবাক হয়ে ভাবতাম, তাই তো! জীবন সম্পর্কে এভাবে তো চিন্তা করিনি! কাজের ব্যস্ততায় ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায় এখন আর নিয়মিত লেখা হয় না। কিন্তু আমি এখনো নিয়মিত পাঠক। তারুণ্যের কোনো বয়স হয় না, স্বপ্নেরও বয়স বাড়ে না। সব জড়তাকে ঠেলে উঠে দাঁড়াতে পারাটাই আমার কাছে সফলতা, ‘স্বপ্ন নিয়ে’ এগোতে থাকাটাই আমার কাছে সার্থকতা।

লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, ওল্ড ডমিনিয়ন ইউনিভার্সিটি, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

আরও পড়ুন