যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন?

বিশ্বের নানা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটা শত বছরের পুরোনো, কোনোটায় শিক্ষক হিসেবে আছেন একাধিক নোবেলজয়ী অধ্যাপক। স্বনামধন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন? পড়ুন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট, এআই গবেষক লাবিব তাজওয়ার রহমান–এর লেখা।

স্ট্যানফোর্ডের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই আছে গ্রোথ মাইন্ডসেট
ছবি: লাবিব তাজওয়ার রহমানের সৌজন্যে

ভাবুন তো, নোবেলজয়ী একজন বিজ্ঞানী আপনার পাশে বসে বলছেন, ‘এই ক্লাসটা নাও। ওটা এবার নিয়ো না।’

আমার ক্ষেত্রে যেমন বলেছিলেন কার্ল উইম্যান। পদার্থবিজ্ঞানে ২০০১ সালে নোবেল পেয়েছিলেন মানুষটা। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এটা খুব স্বাভাবিক। এমন অনেক বিখ্যাত লোক, যাঁদের নাম আমরা বইপত্রে পড়ি, এখানে আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। আমার ব্যাচেলর শেষে মাস্টার্সের রেকমেন্ডেশন লিখেছিলেন অ্যান্ড্রু এনজি, এআইয়ের জগতে যিনি একজন কিংবদন্তি। এমন জায়গায় পড়লে মনে হয়, কিছুই অসম্ভব নয়।

স্ট্যানফোর্ডের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর উন্মুক্ততা। এখানে ছাত্র আর অধ্যাপকদের সম্পর্ক সহকর্মী বা বন্ধুর মতো। একবার আমার এক অধ্যাপক আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমার স্টার্টআপে আমি কি কো-ফাউন্ডার হতে পারি?’ এত বড় একজন মানুষ, অথচ কত সহজেই না এমন কথা বললেন। অধ্যাপকেরা এখানে শুধু পড়ান না, নিজেরা অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্ন দেখতে শেখান।

আরও পড়ুন

স্ট্যানফোর্ডের ক্যাম্পাস বিশাল, আট হাজার একরের বেশি, কিন্তু এখানকার আসল সৌন্দর্য মানুষ। যেসব বন্ধু এখানে পেয়েছি, তাঁরা আলহামদুলিল্লাহ অসাধারণ। কেউ অলিম্পিকে গেছেন, কেউ বিখ্যাত ইউটিউবার, কেউ আবার বড় শিল্পী। আমার মতো অনেক বন্ধুই স্টার্টআপ শুরু করেছেন, কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছেন। অনেকে এখনো নিজেদের প্যাশন খুঁজছেন। এখানে কেউ আপনার কাজকে জাজ (বিচার) করতে আসবেন না। বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই আছে গ্রোথ মাইন্ডসেট—অর্থাৎ এমন বিশ্বাস যে কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন ও চেষ্টার মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো সম্ভব।

লাবিব তাজওয়ার রহমান
ছবি: লাবিব তাজওয়ার রহমানের সৌজন্যে

স্ট্যানফোর্ড আর ‘উন্নত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কারখানা’ সিলিকন ভ্যালি যেন একে অপরের অংশ। এখানে পড়ার সময়ই বুঝতে পেরেছি, নতুন কিছু শেখা বা করার জন্য বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়। মেশিন লার্নিং ক্লাসে এক প্রজেক্টের সময় দেখলাম টিমমেটরা সিলিকন ভ্যালির বড় বড় কোম্পানির জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী। এমনকি সেখানকার পরিচালকেরাও নতুন কিছু শেখার জন্য স্ট্যানফোর্ডের ক্লাসে আসেন। অনেক ক্লাসে এসব কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি কাজ করা যায়। এখানে শেখার পরিবেশটা একেবারে উন্মুক্ত।

আরও পড়ুন

স্ট্যানফোর্ডে প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু ঘটে। লাইব্রেরি, ক্লাসরুম বা বেঞ্চে আপনি এমন মানুষদের দেখবেন, যাঁরা আপনাকে নতুন কিছু শেখাবেন। এখানে অনেকেই ধর্ম আর নিজের পরিচয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন। এ ধরনের আলাপ-আলোচনা খুবই অর্থপূর্ণ। মনে হয়, এখানে সবার মধ্যে একটা ‘বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণশক্তি’ আছে। মানুষ একে অন্যের কাছ থেকে শেখার জন্য সব সময় আগ্রহী। এমনকি মেডিকেল স্টুডেন্ট, এআই গবেষক আর শিল্পীরা একসঙ্গে শহরের ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন—এটাই স্ট্যানফোর্ড। আপনি এক বিষয়ে দক্ষ হলে সেটাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য অন্য ক্ষেত্রের লোকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

এ কারণেই প্রথম দিন এখানে পা রেখে নার্ভাস লাগেনি; বরং চারপাশের মানুষ দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছি। এখানকার বিখ্যাত অধ্যাপক, শিক্ষার্থী, সবাই ভীষণ নম্র। সাহায্য করতে উন্মুখ। প্রথম দিনই ভেবেছিলাম, আমিও এমন একজন হতে চাই, যে নিজে ভালো করবে আর অন্যদেরও সাহায্য করবে। এখানে প্রত্যেকেই একে অন্যের স্বপ্ন পূরণে সঙ্গী। প্রথম দিন থেকেই অনুভব করেছিলাম, এটা শুধু একটা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং এমন একটা ‘কমিউনিটি’, যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের এবং অন্যের জীবনে পরিবর্তন আনতে চায়।

আরও পড়ুন