পরিবেশ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি, পেয়েছেন ২ হাজার ডলার

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন হাসিবুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ও দ্য নেচার কনজারভেন্সির পক্ষ থেকে দুই হাজার মার্কিন ডলারের তহবিল পেয়েছেন হাসিবুল হাসান। কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষে পড়েন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

যে কাজের জন্য এই তহবিল

দুই মাসের এক্সটার্নশিপে মিঠাপানি সংরক্ষণের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন হাসিবুল হাসান। ঢাকার বনানী লেক ও কড়াইলের পানির সমস্যা, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বনানী লেকের পানিতে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, সমাজে কী রকম প্রভাব পড়েছে, কেন এই লেক বিলুপ্তির পথে ইত্যাদি বিষয় তাঁর কাজে উঠে এসেছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যই ‘ইকোফ্লো রিভাইভ’ নামে একটি প্রকল্প সাজিয়েছেন তিনি। আর তা বাস্তবায়নের জন্যই পেয়েছেন তহবিল।

আরও পড়ুন

কী আছে তাঁর প্রকল্পে? হাসিবুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশুর একটা উদ্যোগ নিশ্চয়ই অনেকের চোখে পড়েছে। তিনি একটা খাল পরিষ্কার করে জায়গাটা রঙিন করেছেন। তাঁর উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়, কিন্তু এটা টেকসই সমাধান নয়। কিছুদিন পর হয়তো এই খাল আবার আগের অবস্থায় ফেরত যাবে। বনানী লেকের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তাই আমরা আগে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছি। পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম নিয়ামক হলো সচেতনতা তৈরি। এ কাজ আমরা স্কুল থেকে শুরু করতে চাই। কীভাবে নিজেদের পানি পরিষ্কার রাখতে হয়, কোথায় ময়লা ফেলতে হয়, এটা যদি সহজ ও আকর্ষণীয় উপায়ে শিশুকে শেখানো যায়, তা বেশ কার্যকর পদক্ষেপ হবে। এরপর আমরা যেতে চাই মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রধানদের কাছে। তাঁদের কথা মানুষ মানবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অতি জরুরি পরিবর্তনগুলো যদি মানুষ মন থেকে গ্রহণ করে, তখন একবার পরিষ্কার করলে লেক আবার নোংরা হবে না।’

কারা অংশ নিতে পারেন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ও দ্য নেচার কনজারভেন্সির এই এক্সটার্নশিপে অংশ নিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। পরিবেশ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় এ সুযোগ। এক্সটার্নশিপ মূলত দুই মাসব্যাপী পেশাদারি কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মাঠের শিক্ষা গুরুত্ব পায় বেশি। এক্সটার্নশিপ সফলভাবে শেষ করলেই কেবল একজন শিক্ষার্থী তাঁর গবেষণাধর্মী কাজকে এগিয়ে নিতে এই তহবিলের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, পরিবেশ নিয়ে কাজ কেন

কলেজে পড়ার সময়ই ছোট পরিসরে সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন হাসিবুল হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর সেই পরিসরকে একটু বড় করেন। সামাজিক কাজের আগ্রহ থেকেই সমমনা আরও দুজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ল্যাব। উদ্দেশ্য ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটা প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে তাঁরা সমাজ গঠন বা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হবেন এবং ইতিবাচক প্রভাব রাখবেন। হাসিবুল বলছিলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের পরিকল্পনা জানালে কর্তৃপক্ষও আমাদের ল্যাবকে সাহায্য করে এবং স্বীকৃতি দেয়।

আরও পড়ুন

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যখন মহাখালী থেকে বাড্ডায় স্থানান্তরিত হয়, তখন মহাখালীর জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কারণ, যাওয়া-আসার রাস্তাতেই লেকটা চোখে পড়ত। তাই বনানী লেক এবং কড়াইল নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।’ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্কও এই ল্যাবকে সহযোগিতা করেছে।

হাসিবুলের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত আছেন মোট ১২ জন শিক্ষার্থী। ভবিষ্যতে আরও তহবিল সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট পরিবেশবিষয়ক সংগঠনের সঙ্গে একযোগে পরিবেশ পরিবর্তনে কাজ করতে চান এই তরুণ।