প্রোগ্রামিংয়ের প্রতিযোগিতায় কেমন করল বাংলাদেশ

এ বছর ৫১তম স্থান পেয়েছে বুয়েট
ছবি: খালেদ সরকার

আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাকে (আইসিপিসি) বলা হয় প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপ। এ বছর এই আসর বসেছিল ঢাকায়। র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং দলই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ১০ নভেম্বর রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত হলো আইসিপিসির ওয়ার্ল্ড ফাইনালস।

আরও পড়ুন

ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ছিল আয়োজনের দায়িত্বে। সার্বিক সহযোগিতা করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। স্বাগতিক দেশ, তাই এবারই সর্বোচ্চ আটটি দল নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ।

এককথায় আইসিপিসি হলো সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর বর্তমান বা আগামী দিনের উপযোগী সমস্যা দেওয়া হয়। ০ ও ১ মানে বাইনারি সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সেটির সমাধান করেন প্রতিযোগীরা। সহজ করে বললে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজাই মূল কথা। প্রতিটি দলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তিনজন করে শিক্ষার্থী। আর একজন করে কোচ।

স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ৮টি দল অংশ নিয়েছে প্রতিযোগিতায়
ছবি: খালেদ সরকার

এবারের প্রতিযোগিতায় ছিল ১২টি প্রোগ্রামিং সমস্যা। সমাধানের সংখ্যার ওপর নির্ধারিত হয় ফলাফল। যদি একাধিক দল সমসংখ্যক সমাধান করে, তবে সময়ের ব্যবধানের ওপর ভিত্তি করে, অর্থাৎ কম সময়ে যারা সঠিক সমাধান জমা দেয়, তারা তালিকায় এগিয়ে থাকে। 

কেমন করল বাংলাদেশ

আয়োজনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ সফল, এটি আইসিপিসির কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন। এখন দেখা যাক কেমন করেছে বাংলাদেশের আট দল। চলতি বছর আইসিপিসিতে অংশগ্রহণের ২৫ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। ফলে দীর্ঘ ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে। এযাবৎকালে ২০০০ সালে চূড়ান্ত পর্বে বুয়েটের ১১তম স্থান, আমাদের সেরা অর্জন। এবার স্বাগতিক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দল অংশ নেয় চূড়ান্ত পর্বে। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ৫১তম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬তম স্থান অর্জন করে। দুটি দলই চারটি করে সমস্যার সমাধান করেছে। প্রতিযোগিতায় ৭৪তম স্থানের পর থেকে বাকি সবার জন্য ছিল বিশেষ সম্মাননা (অনারেবল মেনশন)। যে সম্মাননা পেয়েছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কেন বাংলাদেশ আইসিপিসিতে খুব একটা ভালো করতে পারছে না? বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক এম কায়কোবাদের সঙ্গে এই নিয়ে কয়েক দিন আগে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘তিন–চার বছর আগে থেকেই আমরা জানি ঢাকায় চূড়ান্ত পর্ব হতে যাচ্ছে। আমাদের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের তৈরি করা, তাদের পেছনে বিনিয়োগ করা। এটার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি লাগে। রাশিয়া থেকে কোচ এনে সপ্তাহ দুয়েক প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ফলাফল আশা করা যায় না।’

আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে টানা ১৬ বছর বিচারক ছিলেন বাংলাদেশের শাহরিয়ার মনজুর। তিনি বলেন, ‘আইসিপিসির প্রশ্ন আগে বেশি কারিগরি ছিল। এখন হয়েছে জ্ঞানভিত্তিক। আমাদের প্রতিযোগীদের ধারাবাহিক প্রস্তুতি সেভাবে হয় না। আরেকটা সমস্যা হলো আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা হওয়ার প্রায় এক বছর পর ফাইনাল হয়। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে তখন পেশাগত জীবনে ঢুকে যান। ফলে একসঙ্গে দলের অনুশীলন করা হয়ে ওঠে না। রাশিয়া বা চীনের প্রতিযোগীদের অনেকে আছেন, যাঁরা সারা দিন এটা নিয়েই থাকেন।’ 

বিদেশি দলের কোচ হয়ে নিজ দেশে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার কৌশল পড়ার সময় ২০০২ ও ২০০৫ সালে নাসা রউফ দুবার অংশ নিয়েছিলেন আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে তাঁদের দল ২৯তম হয়। নাসা এবার ঢাকার চূড়ান্ত পর্বে এসেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া দলের কোচ হয়ে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন ২০০৮ সাল থেকে। মাঝে দু–এক বছর ছিলেন না। বিদেশি দলের কোচ হয়ে নিজ দেশের আসার অনুভূতি কেমন? নাসা রউফ বললেন, ‘গর্বের। আমি আমার দলের সদস্যদের বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। বলেছি, “এই দেখো, কোথায় আমি বেড়ে উঠেছি, কোথায় পড়াশোনা করেছি, কারা আমার শিক্ষক।” এটা সত্যিই তাদের ও আমার জন্য ভালো লাগার এক অনুভূতি। আমার দলকে আমার শিকড় দেখাতে পেরেছি।’