ছোটবেলা থেকে যে রুটিন মেনে জাপানিরা সাফল্যের দেখা পায়

সঠিক জীবনযাপনে রুটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই রুটিন তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে মাথায় রেখে। কিন্তু জাপানিরা বিশ্বাস করে, রুটিন মানেই শুধু অন্যভাবে কোনো লক্ষ্যের পেছনে ছোটা নয়। বরং একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকা, যাতে নিজের লক্ষ্য যেমন পূরণ হয়, তেমনই মেলে বাড়তি সুবিধা। জাপানি সংস্কৃতিতে একে বলা হয় ‘শুকান’।

ছোটবেলা থেকেই জাপানি শিশুরা রুটিনের মধ্যে বড় হতে শেখেছবি: পেক্সেলস

‘শুকান’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অভ্যাস বা রুটিন। কিন্তু আভিধানিক অর্থের থেকেও এর পরিধি অনেক বড়। জাপানিরা বিশ্বাস করে, প্রকৃত উন্নতি আসে ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল অনুশীলনের মাধ্যমে, ক্ষণস্থায়ী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নয়।

শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্র—যেখানেই হোক না কেন, জাপানি সংস্কৃতিতে অভ্যাসকে ধরা হয় ভিত হিসেবে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তোলে একজন মানুষের চরিত্র, সততা ও কর্মদক্ষতা।

ছোটবেলা থেকেই জাপানি শিশুরা রুটিনের মধ্যে বড় হতে শেখে। স্কুলগুলোতে প্রতিদিন ‘ও-সোজি’ বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানো হয়। আবার কর্মক্ষেত্রে তাদের সেখানো হয় ‘কাইজেন’ দর্শন। যার অর্থ ধারাবাহিক উন্নতি।

কাইজেন দর্শনের উদ্ভাবক মাসাকি ইমাই চেষ্টা করেছেন ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবনকে পরিবর্তন করার। কাইজেন দর্শনও সে কথা বলে। মজার ব্যাপার হলো ইমাই এই পদ্ধতি শুরু করেছিলেন একটি কারখানায়। সেখান থেকে পুরো জাপানে ছড়িয়ে পরে এই দর্শন। দর্শনটা খুবই সাধারণ, দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসগুলো একসময় হয়ে উঠে স্থায়ী সাফল্যের কারণ।

২০১৫–১৮ সাল পর্যন্ত চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ছোটবেল থেকে পুঙ্খনুপুঙ্খ রুটিন মেনে চলছিল—ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময়, হোমওয়ার্ক থেকে শুরু করে স্ক্রিন টাইম ছিল বাধাধরা, বাকিদের তুলনায় তারা যেমন পড়াশোনায় ভালো, তেমনই চিন্তাভাবনাতেও এগিয়ে।

অন্যদিকে ২০২৩ সালে ‘জার্নাল অব চাইল্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি স্টাডিজ’-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮-৯ বছর বয়সী যেসব শিশু নিয়মিত রুটিন মেনে চলেছে, তারাই মানসিকভাবে বেশ এগিয়ে আছে।

নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, খাবার খাওয়া, একসঙ্গে কাজ করা—সবকিছুর মধ্য দিয়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। যার প্রভাব পরেছে পড়াশোনায়।

আরও পড়ুন

শুকান মূলত প্রভাব বিস্তার করে ছোট ছোট পরিবর্তনে, ছোট ছোট রুটিনে। প্রতিদিনের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো বদলে দিতে পারে আপনার জীবনযাপন। জীবনে শুকানের প্রভাব বুঝতে চাইলে এসব ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলুন নিজের মধ্যে।

ছোট কিছু দিয়ে শুরু করুন: যে কাজটা করতে চান, শুরুতে খুব অল্প পরিমাণে শুরু করুন। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে মানিয়ে নিন। যদি প্রতিদিন মেডিটেশন করতে চান, তবে ২০ মিনিট নয়, ২ মিনিট দিয়ে শুরু করুন। এতে শরীর ও মন একবার মানিয়ে নিলে কাজ করতে সুবিধা হবে।

ধারাবাহিক হোন: অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। নতুন অভ্যাসটি প্রতিদিন একই সময়ে পালন করুন। একবার যখন ধারাবাহিকতা এসে যাবে জীবনে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেটাকে আলাদা কিছু মনে হবে না।

রুটিনের সঙ্গে মিলিয়ে নিন: নতুন অভ্যাসকে যত তাড়াতাড়ি পুরোনো অভ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারবেন, তত সহজে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন। ধরুন, দুই মিনিট মেডিটেশন করতে চান। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার পর দুই মিনিট সময় তৈরি করুন। এতে দেখবেন দুটি কাজ সহজেই একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে। একে অনেকে ‘হ্যাবিট স্ট্যাকিং’ বলেন।

ধীরে ধীরে উন্নতি করুন: কাইজেনের দর্শন অনুযায়ী একদিনে সব পরিবর্তন চলে আসবে না। ধীরে ধীরে ছোট ছোট পদক্ষেপে বড় পরিবর্তন ধরা পরবে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত অভ্যাসগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং হতাশ না হওয়া। কথায় আছে, অভ্যাস শুরু করার থেকে মেনে চলা বেশি কষ্টকর। অভ্যাসে যাতে কোনো বাধা না পরে।

আরও পড়ুন

বেশির ভাগ সময়ই আমরা নতুন রুটিন তৈরি করি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। হয় ওজন কমানো, নয়তো খরচ কমানো। বড় একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে রুটিনে আমুল পরিবর্তন আনি আমরা। কিন্তু শুকান সেই বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে এমনভাবে পরিবর্তন করে যে বড় বড় লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।
ছোট থেকে শুরু করুন, প্রতিদিন একইভাবে কাজ করতে থাকুন। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবেই। শুকান মূলত সে কথাই বলে।

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুন