‘স্বাস্থ্যকর’ এসব অভ্যাসে নষ্ট হতে পারে হরমোনের ভারসাম্য
ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তা পাওয়া বহু অভ্যাসের চর্চাই করেন অনেকে। সুস্থতার পদক্ষেপ হিসেবে শুরু করা হলেও আদতে এসব পদ্ধতির সবই স্বাস্থ্যকর নয়। এমন কিছু অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেসবের চর্চা করতে গিয়ে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ঘুমসহ জীবনধারার নানা দিকের সঙ্গে হরমোনের ভারসাম্যের সম্পর্ক আছে। তাই এসব বিষয়ে কোনো ভুল অভ্যাস গড়ে তুললে মুশকিলে পড়তে পারেন আপনি। আপাতদৃষ্টে যেসব স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চায় হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, সেসবের কয়েকটি সম্পর্কে জানালেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
ঘুম ভেঙে ঠান্ডা পানির ঝাপটা
ঘুম থেকে ওঠার পর দ্রুত সতেজ হয়ে ওঠার জন্য চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিই আমরা। কিন্তু ঘুম ভাঙার পরই ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া হলে দেহ সেটিকে একটি ‘স্ট্রেস’ বা চাপ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বাড়ে। এতে আপনি কিছুটা সতেজ অনুভব করলেও দিনের পর দিন এমন চর্চায় দেহের কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাতে মধ্যসকাল নাগাদ আপনি নিস্তেজ বা বিরক্ত অনুভব করবেন।
ফুরফুরে হয়ে উঠতে সকালে ঘুম ভাঙার পর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করাই যথেষ্ট। তবে এরপরও যদি আপনার ঘুমভাব বা ক্লান্তি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার রাতের ঘুমটা ভালো হয়নি। প্রায়ই এমন হলে রাতের ঘুমের ব্যাপারে যত্নশীল হোন, রোজ ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে; বরং এই ঠান্ডা পানির ঝাপটা আপনি কাজে লাগাতে পারেন ব্যায়ামের পর। তাতে এ ধরনের ঝুঁকি নেই।
অতিরিক্ত ডায়েট
সুস্থ থাকতে আপনাকে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করাও ঠিক নয়। সকালের নাশতা বাদ দিলে থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বাধা পেতে পারে। নারী ও পুরুষ হরমোনের স্বাভাবিকতাও নষ্ট হতে পারে।
কেউ কেউ সারা দিনেই খুব কম পরিমাণ শর্করা গ্রহণ করেন। এতেও থাইরয়েড হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়, কমে যায় ‘হ্যাপি হরমোন’ সেরোটোনিনের মাত্রাও।
মনে রাখবেন, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকাও দেহের জন্য একটা ‘স্ট্রেস’। এর ফলে বাড়তে পারে কর্টিসলের মাত্রা। মনমেজাজও বিগড়ে থাকতে পারে।
পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবেও নারী ও পুরুষ হরমোনের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি হয়। সুস্থ থাকতে সব পুষ্টি উপাদানই গ্রহণ করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে। সকালে অবশ্যই ভালোভাবে নাশতা করবেন, রাতে কিছু খাবেন। সারা দিনেও লম্বা সময়ের জন্য না খেয়ে থাকবেন না। প্রয়োজনে অল্প পরিমাণ খাবার কয়েক ধাপে খান। আর শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে দেওয়া থেকেও অবশ্যই বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত ব্যায়াম
ভারী ব্যায়ামের অতিরিক্ত চর্চা করা ভালো নয়। ভারী ব্যায়াম করলে সপ্তাহে দুয়েক দিন দেহকে বিশ্রামও দিতে হয়। এসব বিষয় খেয়াল না রাখলে দেহে কর্টিসলের মাত্রা বাড়তি থাকে, দেহের স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে যা সারা দিনে চক্রাকারে কমবেশি হওয়ার কথা। এই চক্র বাধা পেলে আপনি দিনের অধিকাংশ সময়ই ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
ব্লু লাইট ফিল্টারের অতিরিক্ত ব্যবহার
সন্ধ্যার পর ব্লু লাইট ফিল্টারের ব্যবহার আপনার ঘুমের জন্য সহায়ক। কিন্তু দিনেও যদি আপনি এমন রোদচশমা পরেন, যা প্রকৃতির নীল আলোকে ফিল্টার করে কিংবা সারা দিনই যদি আপনি ডিজিটাল স্ক্রিনে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করেন, তাহলে কিন্তু মুশকিল।
এমন ক্ষেত্রে আপনার দেহ দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে অপারগ হয়ে পড়তে পারে। ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাতে দিনের বেলা ঘুম আসতে পারে আপনার, রাত কাটতে পারে নির্ঘুম। তাই নিয়মমাফিক ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
ঘুমের জন্য মেলাটোনিন গ্রহণ
মেলাটোনিন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। প্রচলিত অন্যান্য ঘুমের ওষুধের চেয়ে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। তবে প্রায়ই মেলাটোনিন গ্রহণ করা উচিত নয়। ওষুধ হিসেবে মেলাটোনিন গ্রহণ করলে দেহের স্বাভাবিক মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে যায়। পরবর্তী সময়ে ওষুধ ছাড়া ঘুমানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তাই কেবল নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মেলাটোনিন গ্রহণ করা উচিত, যেমন দূরের দেশে গিয়ে সময়ের ব্যবধানের কারণে ঘুমের সমস্যা (জেট ল্যাগ) এড়াতে। সেটিও কেবল অল্প কিছু দিনের জন্য।