বুয়েটে প্রথম তোফায়েল বললেন, সময়ের দিকে তাকাইনি

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার পূর্ব চান্দিপুরে। মায়ের নাম মিনা বেগম, বাবা মনিরুল ইসলাম। পরীক্ষার প্রস্তুতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় চৌধুরী

প্রথম আলো:

হাজারো শিক্ষার্থী বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এতজনকে পেছনে ফেলে আপনি প্রথম হলেন, নিশ্চয়ই আপনার প্রস্তুতিতে বিশেষ কিছু ছিল। সেটা কী?

তোফায়েল আহমেদ: প্রথম হব ভাবিনি। কিন্তু শুরুর দিকে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি প্রস্তুতি নিয়েছি পরিকল্পনামাফিক। প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতাম। সে অনুযায়ী পড়তাম। সময়ের দিকে তাকাইনি। কখনো ১০ ঘণ্টাও লাগত পড়া শেষ করতে। আর প্রকৌশলবিদ্যার দিকে নজর ছিল। তাই গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন—এসব বিষয় অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি।

প্রথম আলো:

কলেজে পড়ার সময় থেকেই কি একটু একটু করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন?

তোফায়েল আহমেদ: হ্যাঁ। কলেজে পড়ার সময় থেকেই একটু একটু করে প্রস্তুতি নিয়েছি। এ জন্য বড় ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। তাঁদের পরামর্শ নিতাম।

প্রথম আলো:

বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখার শুরু কবে?

তোফায়েল আহমেদ: কলেজে ওঠার পর বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। আমার কলেজের (চট্টগ্রাম কলেজ) অনেক বড় ভাই বুয়েটে পড়েন। তাঁদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তাঁদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতাম।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

মা-বাবা, পরিবার, বন্ধু, কলেজের শিক্ষক—কার কোন সহযোগিতা বা পরামর্শ বিশেষ কাজে এসেছে?

তোফায়েল আহমেদ: মা-বাবার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাঁরা সব সময় বড় স্বপ্ন দেখার কথা বলেন। ভালো কিছু করার পরামর্শ দেন। বন্ধুরাও উৎসাহ জুগিয়েছে। আর শিক্ষকেরা আমার স্বপ্ন পূরণে সব সময় সহযোগিতা করেছেন।

প্রথম আলো:

জুলাই মাস থেকেই দেশের শিক্ষার্থীদের মনোজগতের ওপর দিয়ে একটা বড় ঝড় গেছে। অনেকেই পড়াশোনায় মন দিতে পারেননি। আপনি কীভাবে মনোযোগ ধরে রেখেছেন?

তোফায়েল আহমেদ: এটা ঠিক বলেছেন। শিক্ষার্থীদের মনোজগতের ওপর দিয়ে একটা বড় ঝড় বয়ে গেছে। আমি নিজেও আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। তখন কোনো পড়াশোনা হয়নি। আসলে এত বড় ঘটনায় মন দিয়ে পড়াশোনা করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে গত জানুয়ারিতে। আন্দোলন শেষে আমি আবার পড়াশোনায় ফিরেছি। পুরোদমে কঠোর পরিশ্রম করেছি। শেষ পর্যন্ত ভালো ফলাফল এসেছে। পরিবারের সবাই খুব খুশি।

প্রথম আলো:

পড়ালেখার পাশাপাশি আপনার আগ্রহ কিসে? শখের বিষয় কী?

তোফায়েল আহমেদ: আমি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ঘুরেছি আমি। তবে এখনো অনেক জায়গায় যাওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ব।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটা ছিল বলে মনে করেন? কীভাবে চ্যালেঞ্জ সামলেছেন?

তোফায়েল আহমেদ: উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার আগের দুই সময়ই আমার জন্য কঠিন ছিল। আমি এ দুই সময়েই গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়েছি। কলেজজীবনের পড়াশোনা পরে ভর্তি পরীক্ষায় কাজে লেগেছে। মুখস্থ করার শক্তি কম ছিল। তাই জীববিজ্ঞানে কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। এ ছাড়া ইংরেজিও একটু কঠিন লাগত। তাই এই দুই বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হয়েছে। কিন্তু কোনো বিষয়কেই কম গুরুত্ব দিইনি। ভবিষ্যতে যাঁরা পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের এ বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত। অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার আগে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। হাল ছেড়ে দেন। আমি মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম।

প্রথম আলো:

বুয়েটে কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন বলে ভাবছেন? কোনো ক্লাবে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা আছে?

তোফায়েল আহমেদ: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রতি আমার অনেক আগ্রহ। আমি এ বিষয়টার গভীরে যেতে চাই। এ কারণে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ব। এআই নিয়ে কাজ করব। আর ক্লাবে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এখনো ভাবিনি। নিশ্চয় ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন ক্লাবের বিষয়ে খোঁজ নেব।

প্রথম আলো:

১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তোফায়েল আহমেদ: আমি বিশ্বনাগরিক হতে চাই। গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে চাই। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চাই।

আরও পড়ুন