যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নেই, র‍্যাঙ্কিংয়েও আছে এগিয়ে

দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষকরাজনীতি বা সেশনজট নিয়ে ভুগছে, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (গাকৃবি) সেখানে ব্যতিক্রম। একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে বেশ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে এর শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, গবেষণানির্ভর শিক্ষাসহ নানা কারণে র‍্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

র‍্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান

সম্প্রতি প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং বলছে, বাংলাদেশের আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাকৃবি আছে ৮০১-১০০০তম অবস্থানে। ৮০০-র ভেতরে দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। সেই হিসেবে গাজীপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের বিবেচনায় ‘অন্যতম সেরা’ বলাই যাই। গত বছরও এই অবস্থানে ছিল গাকৃবি।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিং ফর ইনোভেশনেও (উরি) ভালো অবস্থানে রয়েছে গাকৃবি। ‘টেকনোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন’ বিভাগে শীর্ষ ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৭৭তম। এ ছাড়া ‘গ্লোবাল টপ ইনোভেটিভ ইউনিভার্সিটিজ’ বিভাগেও শীর্ষ ৪০০-র মধ্যে গাকৃবির অবস্থান ৩৩১তম।

আরও পড়ুন

সবুজ প্রান্তরে আধুনিক শিক্ষা

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস। ১৯৭৯ সালে ‘বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞান কলেজ’ নামে এটি যাত্রা শুরু করে। তখন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধরা হতো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একাডেমিক অংশ। ১৯৮৩ সালে এটির নাম হয় ‘ইপসা’ (ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েশন স্টাডি ইন অ্যাগ্রিকালচার)। ১৯৯১ সালে উত্তর আমেরিকার ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির অনুকরণে ট্রাইমেস্টার ও ক্রেডিটভিত্তিক কারিকুলাম গ্রহণ করে, যা পাঠদান কার্যক্রমে আনে বড় পরিবর্তন।

১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরের বছর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ (বশেমুরকৃবি) নামে ১৮৭ একর জমিতে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এ বছর ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন নাম হয় গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন
গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

একাডেমিক শৃঙ্খলা

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো সেশনজট নেই। ট্রাইমেস্টার সিস্টেম ও কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতির কারণে প্রতিবছর তিনটি টার্মেই ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল ঘোষণা নির্ধারিত সময়েই হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী আকিফ বিন সাঈদ বলেন, ‘আমাদের এখানে সেশনজট নেই, শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে খুব আন্তরিকভাবে যুক্ত থাকেন। গবেষণার সুযোগকে এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই, জ্ঞানের প্রতিযোগিতাটাই বড়।’

জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, উপাচার্য, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে
শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও কৃষিক্ষেত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারব।
জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, উপাচার্য, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন

গবেষণা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

প্রতিষ্ঠার পর থেকে গাকৃবি কৃষি, খাদ্য, পশুসম্পদ ও পরিবেশবিজ্ঞানে ৯৩টি উচ্চফলনশীল জাত এবং ২০টির বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রকাশ, বিদেশি অর্থায়নে প্রকল্প ও আধুনিক গবেষণাগার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

এখানে কর্মরত ২৩০ জন শিক্ষক, যার মধ্যে ৯৫ জন অধ্যাপক, ৫৩ জন সহযোগী অধ্যাপক ও ৬৭ জন সহকারী অধ্যাপক। ১৩৬ জন শিক্ষক পিএইচডিধারী। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন ২ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, নিরাপদ ও রাজনীতিমুক্ত পরিবেশই এর কারণ। কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের শিক্ষার্থী মহুয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘নিরাপদ, শান্ত ও রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারছি, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আমাদের শেখাকে আরও আনন্দদায়ক করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, তা আমাদের প্রত্যেকের পরিশ্রমের প্রতিফলন।’

যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান; ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে গাকৃবির যোগাযোগ আছে। বর্তমানে এখানে ২৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন, যা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরু থেকেই ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখার নীতিতে অনড়। হলে শতভাগ আবাসিক ব্যবস্থা থাকায় শিক্ষার্থীরা নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ পরিবেশে থাকেন। চূড়ান্ত বর্ষে সবার জন্য বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা আছে। পড়ালেখার চাপ থাকে সারা বছর। এর মধ্যেই নানা রকম আয়োজনে মেতে থাকে ক্যাম্পাস।

আরও পড়ুন