আইইউবিএটি চলছে স্বপ্নদ্রষ্টা আলিমউল্যা মিয়ানের দেখানো পথে

ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি নিয়ে লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস

আইইউবিএটির ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নিতে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা বদলে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়েই কাজ করেছেন অধ্যাপক এম আলিমউল্যা মিয়ান। আশির দশকে তিনি প্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি (কেএসইউ), থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এটিআই) ও অ্যাজাম্পশন ইউনিভার্সিটির (এবিএসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আইইউবিএটি (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি)। ১৯৯২ সালে বিবিএ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আইইউবিএটিতে প্রথম ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু হয়।

শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আসা তরুণদের বুকে স্বপ্ন বুনে দিতে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন স্নাতক তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৪৪টি উপজেলা থেকে ১৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইইউবিএটি থেকে স্নাতক হয়েছেন।

আরও পড়ুন

‘অ্যান এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনড ফর লার্নিং’; অর্থাৎ, জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ— স্লোগান সামনে রেখে আমরা শিক্ষার্থীদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। সময়োপযোগী, মানসম্মত ও ক্যারিয়ার গঠনে ভূমিকা রাখে, এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই আমরা। ঢাকার ভেতর নিজস্ব ২০ বিঘা জায়গায় শিক্ষার্থীদের জন্য আছে নানা সুযোগ-সুবিধা-সংবলিত ক্যাম্পাস। ৬টি অনুষদে ১২টি প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আইইউবিএটিতে স্নাতক পর্যায়ে বিবিএ, পুরকৌশল, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল, যন্ত্রপ্রকৌশল, অর্থনীতি, ইংরেজি, কৃষি, টু৵রিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নার্সিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আছে এমবিএ ও এমপিএইচ প্রোগ্রাম।

আরও পড়ুন

তিন দশক ধরে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন আইইউবিএটির স্নাতকেরা। আমাদেরই তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলের স্নাতক মাহমুদুল হাসান এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলে কর্মরত। ইউনিলিভারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন ফয়সাল মাহমুদ, তিনি আমদের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক। বিবিএর স্নাতক শাওন আজাদ গ্রামীণফোনে পরিচালক পদে কর্মরত। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নিয়োগ কর্মকর্তা আমাদের গ্র্যাজুয়েট। কিছুদিন আগে আমাদের একজন অ্যালামনাই গবেষক হিসেবে নাসায় চাকরি পেলেন। নার্সিংয়ে স্নাতক মোহাম্মদ আলী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন গবেষণার জন্য শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিসহ দেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যাংক, টেলিকম সেবা, এফএমসিজিসহ নানা ক্ষেত্রে আইইউবিএটির স্নাতকদের দৃঢ় অবস্থান আছে। ভিনদেশেও অনেকে ভালো অবস্থানে আছেন।

আইইউবিএটির প্রত্যয় হলো, ‘যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা—প্রয়োজনে মেধাবী তবে অসচ্ছলদের অর্থায়ন’। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তির সুযোগ দিচ্ছে আইইউবিএটি। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়ান বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়াও আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শতভাগ পর্যন্ত মেধা বৃত্তি আছে। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করতে ১৫% বিশেষ বৃত্তিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯৭টি বৃত্তি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

গবেষণা ও প্রকাশনায় সহায়তার জন্য আছে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট। তারা শিক্ষক ও গবেষকদের গবেষণা মূল্যায়ন করে, দিকনির্দেশনা দেয়। এই ইনস্টিটিউটের অনুমোদন ও দিকনির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসায় প্রশাসন, পরিবেশ, জলবায়ু, টেকসই উন্নয়ন, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস
ছবি: সংগৃহীত

আজকের তরুণেরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেবে। সে জন্য আমরা তৈরি করেছি আইইউবিএটি ইনোভেশন হাব। যেখানে তরুণদের ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

জানিয়ে রাখি, আইইউবিএটি ১৯৯৭ সালে অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিসের সদস্য হয়, যার মাধ্যমে কমনওয়েলথের সব দেশেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি স্বীকৃত।

কিউএস-২০২৪ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আইইউবিএটির অবস্থান ষষ্ঠ। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১তম এবং বিশ্বে ১ হাজার ৪১১তম। এশিয়ার মধ্যে আমরা ৫১১-৬০০তম অবস্থানে আছি। আশা করছি, সামনের দিনে আরও অগ্রভাগে আমাদের অবস্থান থাকবে।

কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত যেকোনো দেশে আইইউবিএটির শিক্ষার্থীরা ক্রেডিট স্থানান্তর করতে পারেন। এ ছাড়া শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি আছে। এই সমঝোতা চুক্তির ফলে গবেষণা কার্যক্রম ও স্বল্পমেয়াদি শিক্ষার্থী-ক্যাম্প পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক বিনিময় করা হয়।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অধ্যাপক এম আলিমউল্যা মিয়ান শিক্ষাদানে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। জন্ম থেকে যে পারিবারিক আদর্শে তিনি বড় হয়েছেন, তা তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। অর্থের অভাবে দেশের কোনো মেধাবী মানুষ যেন উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই উদ্যোগে কাজ করে গেছেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। এই ঐতিহ্য ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে আইইউবিএটি।