ফ্রিজের খারাপ কমপ্রেসর কেন বিপজ্জনক? খারাপ হলে বুঝবেন কী করে?
রেফ্রিজারেটরের (ফ্রিজের) কমপ্রেসর যত্নে না রাখলে বিস্ফোরণ পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনায় ঘরের বাসিন্দাদেরও জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। চলুন ঝটপট জেনে নিই খারাপ কমপ্রেসরের লক্ষণ আর কমপ্রেসর ভালো রাখতে কী করবেন।
কমপ্রেসর খারাপ হলে কী হয়
ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কমপ্রেসর। এটা কুল্যান্টকে (এমন পদার্থ, যা তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় তাপ শোষণ করে পরিবেশ ঠান্ডা করে) কয়েলের ভেতর দিয়ে পরিচালিত করে, যার ফলে খাবার ঠান্ডা থাকে।
কমপ্রেসর নষ্ট হলে সাধারণত খাবার ও পানীয় ঠিকমতো ঠান্ডা হয় না। কমপ্রেসরের সমস্যায় কখনো কখনো পুরো ফ্রিজ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, ফলে নষ্ট হয়ে যায় খাবার। কমপ্রেসরের ভেতরে গ্যাসের পাশাপাশি একধরনের তেল থাকে।
ভেতরের চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এটি বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে।
নষ্ট কমপ্রেসরের লক্ষণ
নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আপনার ফ্রিজের কমপ্রেসর নষ্ট কি না।
অস্বাভাবিক শব্দ: ফ্রিজ যদি জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে, তাহলে বুঝবেন এতে কোনো সমস্যা আছে। আধুনিক ফ্রিজগুলো সাধারণত নীরব থাকে।
ঠান্ডা না হওয়া: হঠাৎ যদি খেয়াল করেন ফ্রিজ ঠিকমতো খাবার ও পানীয় ঠান্ডা করতে পারছে না, তাহলে বুঝবেন কোনো সমস্যা আছে। হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ফ্রিজের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।
ফ্যান খারাপ: ফ্রিজের ফ্যান নষ্ট হলে ঠান্ডার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এতে ফ্রিজ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
নষ্ট কন্ট্রোল বোর্ড: বিশেষ করে পানির মাধ্যমে এই সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘদিন পানি লেগে বোর্ড নষ্ট হয়ে কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গ্যাসের গন্ধ: ফ্রিজের ভেতর থেকে হঠাৎ পোড়া বা কেমিক্যালের মতো গন্ধ এলে বুঝতে হবে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে। এটাও কমপ্রেসর খারাপের লক্ষণ।
গরম গ্যাসলাইন: অতিরিক্ত গরম হয়ে গ্যাসের লাইনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে কুলিং বন্ধ হয়ে যায়।
কনডেন্সার কয়েল: কয়েলে ধুলো জমলে কমপ্রেসর অতিরিক্ত গরম হয়ে নষ্ট হতে পারে।
বারবার বন্ধ–চালু: ফ্রিজ যদি বারবার বন্ধ হয়ে আবার চালু হতে থাকে, তাহলে কমপ্রেসর পরীক্ষা জরুরি। স্টার্ট রিলে খারাপ হলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
এসব লক্ষণের কোনোটা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উচিত।
কমপ্রেসরের যত্নে
কমপ্রেসর নষ্ট হওয়া ঠেকাতে ফ্রিজ নিয়মিত সার্ভিস করা দরকার।
নির্দিষ্ট সময় পরপর ফ্রিজের ভেতরে ও বাইরে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
দরজার রাবার সিল চেক করুন।
কয়েল পরিষ্কার করাও জরুরি।
আরও জেনে রাখুন
বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আবার হঠাৎ এলে কিংবা ভোল্টেজ ওঠানামা করলে কমপ্রেসরের মোটর উল্টো ঘুরতে পারে। এতে কমপ্রেসর জ্বলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ভোল্টেজ ওঠানামা করলে রেফ্রিজারেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা উচিত।
অনেক ফ্রিজেই ভোল্টেজ ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করার বিল্ট ইন প্রযুক্তি থাকে। কিন্তু ফ্রিজের কমপ্রেসর ও পাওয়ার সার্কিট ভালো রাখার জন্য ফ্রিজের ওপর এই দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে ভালো মানের ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা উচিত।
কারণ, ফ্রিজে যত বেশি ভোল্টেজ ওঠানামা সহ্য করবে, দীর্ঘমেয়াদে ঠান্ডা করার ক্ষমতা তত কমবে। লোডশেডিংয়ের পর যখন বিদ্যুৎ আসে, স্ট্যাবিলাইজার সঙ্গে সঙ্গে তা যন্ত্রপাতিকে সরবরাহ না করে কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত নিজের মধ্যে গ্রহণ করে।
ফলে লাইনে সার্জ ভোল্টেজ (বিদ্যুতের হঠাৎ এবং ক্ষণস্থায়ী বৃদ্ধি) থাকলেও তা যন্ত্রপাতির কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ ওঠানামার ফলে ক্ষতির হাত থেকে ফ্রিজকে রক্ষা করতে ব্যবহার করতে পারেন স্বয়ংক্রিয় ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার।
সূত্র: ফ্রিডম অ্যাপ্লায়েন্স সার্ভিস ও টমস গাইড