এফডিআর নাকি ডিপিএস—কোন পদ্ধতিতে টাকা জমাবেন

ব্যাংকে টাকা জমানোর দুটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো এফডিআর, ডিপিএস। আপনার আর্থিক অবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক অবস্থা ও সুদের হার জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ব্যাংক এফডিআরের বিপরীতে ঋণসুবিধা দেয়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য দুটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট) এবং ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)। এফডিআরে গ্রাহক এককালীন বড় অঙ্কের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাখেন। আর ডিপিএস হলো মাসিক কিস্তিতে ধাপে ধাপে টাকা জমানোর একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। ১৮ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে এফডিআর বা ডিপিএস করতে পারেন।

ব্যাংক বাছাইয়ে কী লক্ষ করবেন

সিটি ব্যাংক পিএলসির হেড অব প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ফারিয়া হক জানান, এফডিআর বা ডিপিএস করার আগে ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক অবস্থা এবং সুদের হার জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডিপিএস বা এফডিআর করার আগে ব্যাংকের আর্থিক সুরক্ষা ও মুনাফার বিষয়টি মাথায় রাখুন।

আরও পড়ুন
যাঁরা অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে চান, তাঁদের জন্য ডিপিএস ভালো
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এফডিআর কাদের জন্য ভালো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘যদি আপনার কাছে কিছু বাড়তি টাকা থাকে, যা স্বল্প থেকে মধ্যম সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চান এবং ঝুঁকি কম রাখতে চান, তাহলে এফডিআর একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়।’

এফডিআরের মূল সুবিধা

  • মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট সুদসহ মূল টাকা ফেরত।

  • ঝুঁকিমুক্ত, বাজারের উত্থান-পতনের প্রভাব নেই।

  • ৩ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মেয়াদ বেছে নেওয়া সম্ভব।

  • অনেক ব্যাংক এফডিআরের বিপরীতে ঋণসুবিধা দেয়; জরুরি প্রয়োজনে জমার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া যায়।

  • অবসর–উত্তর জীবন বা বড় প্রকল্পের জন্য তহবিল তৈরি সহজ।

আরও পড়ুন
এফডিআরে ৩ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মেয়াদ বেছে নিতে পারেন
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ডিপিএস কাদের জন্য ভালো

যাঁরা সীমিত আয় থেকে নিয়মিতভাবে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে চান, তাঁদের জন্য ডিপিএস সবচেয়ে সুবিধাজনক।

ডিপিএসের মূল সুবিধা

  • মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে মুনাফাসহ মূল টাকা ফেরত।

  • সন্তানের শিক্ষা, নিজের ভবিষ্যৎ বা অন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণের জন্য তহবিল গঠনে সহায়ক।

  • নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলে।

  • মেয়াদ ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত।
    কিছু ব্যাংক বিমাসুবিধা এবং ঋণসুবিধাও দেয়।

টিপস

  • একবারে বড় ডিপিএস না করে, ছোট ছোট ২-৩ ভাগে ভাগ করে নেওয়া ভালো।

  • যেমন যদি আপনি মাসে ৫ হাজার টাকা ডিপিএস করতে চান, তাহলে ২ হাজার ও ৩ হাজার টাকার দুটি ভিন্ন মেয়াদে (১ বছর এবং ৩ বছর) ডিপিএস খুলতে পারেন। পরে মেয়াদ শেষ হলে অংশটা ফেরত পেয়ে আবার এফডিআর বা নতুন ডিপিএসে ব্যবহার করতে পারেন।

ডিপিএস বা এফডিআর করার আগে ব্যাংকের আর্থিক সুরক্ষা ও মুনাফার বিষয়টি মাথায় রাখুন
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কোনটি বেছে নেবেন

  • যদি আপনার হাতে বড় অঙ্কের নগদ টাকা থাকে—এফডিআর।

  • যদি প্রতি মাসে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে চান—ডিপিএস।

  • এফডিআর অনেক ব্যাংকে মাসিক কিস্তিতে সুদ দেয়, আবার কিছু ব্যাংক মেয়াদ শেষে মূল টাকা ও সুদ ফেরত দেয়।

  • এফডিআর ও ডিপিএস খোলার প্রক্রিয়া ব্যাংকে সরাসরি বা অনলাইনে করা যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি

  • ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট)

  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

  • নমিনির তথ্য (নাম, ঠিকানা)

  • অনলাইনে ৫-১০ মিনিটে আবেদন চালু করা যায়।

  • সঠিক কাগজপত্র ও তথ্য থাকলে আপনার সঞ্চয় শুরু করা দ্রুত ও নিরাপদ হবে।

আরও পড়ুন