সকালে বাড়ি থেকে এসেছি, কী এমন ঘটল যে সন্ধ্যায়ই বাবাকে চলে আসতে হলো

কী এমন ঘটল যে সন্ধ্যায়ই বাবাকে চলে আসতে হলোপ্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

সন্ধ্যা ছয়টার মতো বাজে। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রুমে রুমে লাইট জ্বলে উঠেছে। হলে আজই আমার প্রথম দিন। সকালে মেজদা এসে হলের গেটে নামিয়ে দিয়ে গেছে। নতুন নতুন মানুষ দেখে শুরুতে আনন্দই লেগেছে।

তবে সন্ধ্যার মুহূর্তটা কেমন যেন বিষণ্ন করে তুলেছে। পরিবার ছেড়ে কোনো দিন আলাদা থাকিনি, সেই কষ্ট জেগে উঠেছে। নানা কিছু ভাবছি, এমন সময় কেয়ারটেকার এসে বললেন, ‘গেটে আপনার বাবা এসেছেন।’

তাঁর কথা শুনে তো আমি হতবাক! সকালে বাড়ি থেকে এসেছি, কী এমন ঘটল যে সন্ধ্যায়ই বাবাকে চলে আসতে হলো! উৎকণ্ঠা আর শঙ্কা নিয়ে গেটের দিকে ছুটলাম। গেটে গিয়ে দেখি ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা।

বাবাকে আর বলতে পারলাম না যে এই অসময়ে কেন এসেছেন? কাছে যেতেই জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা। বাবার কান্না দেখে আশপাশের মেয়েরাও চোখের পানি সামলাতে পারল না।

মেজদার সঙ্গে সকালে আসার সময় বাবা বাড়িতে ছিলেন না। বুঝতে পারলাম বাড়িতে আমার অনুপস্থিতি বাবা সহ্য করতে পারেননি। তাই দুপুরে রওনা দিয়ে চলে এসেছেন।

আরও পড়ুন

ক্যাম্পাসে বাবাকে নিয়ে ঘুরলাম। ঘণ্টাখানেক পার করে অনেকটা জোর করেই তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। জোরাজুরি করে পাঠিয়ে দিয়েছি বলে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি! স্কুলের দিনগুলোর মতো বাড়িতে থাকলে নিশ্চয়ই সে রাতেও চুলে বিলি কেটে দিতেন বাবা।

আজ এত দিন পরও বাবার সেদিনের স্মৃতি ভুলতে পারি না। আমার বাবা শিক্ষক মানুষ। তাঁর হাত ধরেই আমাদের ভাইবোনদের স্কুলজীবন কেটেছে। মেঠোপথ দিয়ে বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতাম। ‘মাস্টারের মেয়ে’ বলে স্কুলে অন্যদের কাছে বাড়তি কদরও পেতাম।

আমরা চার বোন। আমাদের মধ্যে নাকি তাঁর মাকে খুঁজে পান বাবা। তাই এখনো তাঁর কন্যাদের ‘মা’ বলে ডাকেন!

বাবা এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাঁকে নিয়ে কত স্মৃতি। কন্যাসন্তান বলে বাবার কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তাই নিজেকে অনেক সময় অনেক অসহায় লাগে।

আরও পড়ুন

আপনিও লিখুন

প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

প্র ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫

ই-মেইল: [email protected]

ফেসবুক পেজ: fb.com/ChutirDine

খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।

আরও পড়ুন