আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি

জ্যামাইকা ইন্টিগ্রেটেড বাংলাদেশি অফিসার্স নেটওয়ার্ক সংগঠনের অনুষ্ঠানে জোহরান মামদানি (মাঝে), পেছনে দাঁড়িয়ে লেখকছবি: পাপিয়া শারমিনের সৌজন্যে

আমি বাংলাদেশি-মার্কিন, নিউইয়র্কের কুইন্সে থাকি। কাজ করি আর স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। সেই আমিও এমন স্বপ্ন কখনো দেখিনি যে অভিবাসী হিসেবে এই শহরের রাজনীতিতে আমাদের শক্ত কোনো অবস্থান থাকতে পারে। কারণ, এত দিন আমাদের কষ্ট বুঝে, পাশে থেকে, আমাদের পক্ষে উচ্চ স্বরে কথা বলার কেউ ছিলেন না। জোহরান মামদানির সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে এই ধারণা বদলাতে শুরু করেছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষেরা ধর্ম, বর্ণ, উচ্চারণ, নাম নিয়ে পদে পদে রেসিজম বা বৈষম্যের শিকার হই। কিন্তু এসব আমরা ভুলে যেতে বাধ্য হই কাজের চাপে, নিউইয়র্ক শহরে টিকে থাকার যুদ্ধে। জীবনযাপনের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে থাকতে ক্লান্ত নিউইয়র্কবাসীর কাছে নতুন আশার নাম জোহরান মামদানি।

মামদানির সঙ্গে প্রথম দেখা

হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জোহরান মামদানি
ছবি: পাপিয়া শারমিনের সৌজন্যে

মেয়র মামদানির সঙ্গে নির্বাচনের আগেই কয়েকবার দেখা হয়েছে। তবে প্রথমবার দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতাটা ছিল অন্য রকম। আগে থেকেই ঠিক ছিল সেদিন আমাদের সংস্থা থেকে দাপ্তরিকভাবে তাঁর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা হবে। আমাদের সংস্থা মানে জীবন (জ্যামাইকা ইন্টিগ্রেটেড বাংলাদেশি অফিসার্স নেটওয়ার্ক)। আমরা সবাই খুবই উদ্দীপনা নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছে যাই।

আমার দায়িত্ব ছিল আয়োজক দলের হয়ে কাজ করা। তাই মঞ্চসজ্জার কাজ শেষে মঞ্চের কাছাকাছি এক কোনায় দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিলাম। জোহরান মামদানি রুমে ঢুকতেই সবাই ‘মামদানি মামদানি’ বলে পুরো হলরুম মুখর করে তোলে। বাস্তবেও সেই চেনা হাসি মামদানির মুখে। আমি তখনো ভিডিও করতে ব্যস্ত।

বুঝতে পেরেই দ্রুত হাত মেলালেন মামদানির সঙ্গে
ছবি: পাপিয়া শারমিনের সৌজন্যে

মামদানি সবার সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে নির্ধারিত আসনের দিকে এগোচ্ছিলেন। ওই মুহূর্তে এতটাই রোমাঞ্চিত ছিলাম যে খেয়ালই করিনি, তিনি ঠিক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বিষয়টা বুঝতে বেশ কয়েক সেকেন্ড লাগল। এরপর যখন বুঝতে পারলাম, ভীষণ লজ্জা পেলাম, হলরুমে তখন হাসির রোল।

আরও পড়ুন

এত বড় মাপের একজন আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য আগেই হাত বাড়াবেন, এটা কল্পনাই করিনি। এই অভিজ্ঞতা কখনোই ভুলব না। এরপরও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে মামদানির সঙ্গে। নির্বাচনের আগে প্রতিবারই মামদানির সঙ্গে কথোপকথনের বিষয় ছিল একটা সুলভ শহর তৈরির জন্য কাজ করা নিয়ে। আর মেয়র মামদানির সেই লক্ষ্য তো এখন সবারই জানা।

মামদানি যেখানে অনন্য

জীবন সংগঠনের আয়োজনে মধ্যমণি জোহরান মামদানি
ছবি: পাপিয়া শারমিনের সৌজন্যে

নিউইয়র্ক শহরের মেয়র মামদানির সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, প্রতিবারই দারুণ দারুণ অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে। বুঝেছি, তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, শ্রোতা হিসেবেও চমৎকার। তাঁকে মনে হয়েছে একজন সহযোদ্ধা আর দারুণ বিনয়ী। কিন্তু যেখানে শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার, সেখানে ঠিকই তিনি হয়ে যান সুপারম্যান। হেসেখেলে যেমন সবার সঙ্গে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মিশে যেতে পারেন, তেমন সবাইকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়াতেও পারেন। আর তাঁর এই গুণই ভোটারদের মন জিতে নিতে সাহায্য করেছে বলে মনে করি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন