শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ এক প্রাঙ্গণ। এক পাশে বিশাল সব জারুলগাছ, অন্যদিকে আমের বাগান। নারায়ণগঞ্জের আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে চারপাশটা একবার ঘুরে দেখতেই হয়। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার নামে গড়ে ওঠা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর তুলনামূলক কম খরচে পাঠদানের জন্য এ অঞ্চলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পড়ছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানে ইংরেজি, ব্যবসায় প্রশাসন, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) এবং ফ্যাশন ও ডিজাইন বিভাগে পড়তে খরচ হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আইন, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) এবং ফার্মাসি বিভাগে পড়ার খরচ একটু বেশি—ছয় থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা। তবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার অমিত রায় জানান, উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন বৃত্তি ও প্রণোদনার মাধ্যমে পড়ার সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যাঁরা জিপিএ–৫ পেয়েছেন, তাঁরা এক লাখ টাকায় বিবিএ, ইংরেজি ও আইন বিষয়ে পড়া শেষ করতে পারবেন। সিএসই ও ফার্মাসিতে পড়তে খরচ পড়বে দুই লাখ টাকার মতো। ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ইইই পড়ার খরচ পড়বে প্রায় দেড় লাখ টাকা। যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিরতি দিয়েছেন কিংবা ড্রপআউট হয়েছেন, তাঁরাও ভর্তি হতে পারেন।
কথা হচ্ছিল চতুর্থ বর্ষের তাহসিনা হোসেনের সঙ্গে। ভবিষ্যতে গবেষক হতে চান এই শিক্ষার্থী। বলছিলেন, ‘আমি এখানকার বিতর্ক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রতি সপ্তাহেই আমাদের নানা ধরনের ক্লাব কার্যক্রম থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে উৎসাহ দেওয়া হয়। যেকোনো সময় এলেই কোনো না ক্লাবের আয়োজন আপনার চোখে পড়বে।’ তাহসিনার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আমাদের আলাপে যোগ দেন তন্বী সরকার, ফারিয়া আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, জোবায়ের হোসেনসহ আরও অনেকে। একেকজনের একেক রকম পরিকল্পনা। কেউ দেশের বাইরে পড়তে যেতে চান, কারও আবার উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রযুক্তিবান্ধব ও ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয় আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই শিক্ষানবিশি, শিক্ষাসফর কিংবা বিভিন্ন শিল্পকারখানার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা, এমন নানা উদ্যোগ চলে সারা বছর। হ্যাকাথন থেকে শুরু করে মুটকোর্টের মতো আয়োজনেও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। ফার্মাসি বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন অনির্বাণ মিত্র। বলছিলেন, ‘আমি যে বিষয়ে পড়ছি, এই বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান বেশ ভালো থাকতে হয়। আমরা সরাসরি কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালসের ল্যাব থেকে শেখার সুযোগ পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন বাংলাদেশের কর্মবাজারের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন, এই ব্যাপারে শিক্ষকেরা সব সময় জোর দেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ক্লাবের সদস্য মিনহা আজমীর বলেন, ‘ফ্যাশনের দুনিয়া কিন্তু রাত পেরোলেই বদলে যাচ্ছে। আবার সারা বিশ্বের পোশাকশিল্পেই বাংলাদেশের একটা বড় অবদান আছে। আমরা যেন বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে পারি, ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারি—এমন সব বিষয়ে আমাদের শিক্ষকেরা সব সময় নজর রাখেন। বিভিন্ন ফ্যাশন ওয়ার্কশপ, সেমিনারের মাধ্যমে আমরা কোথায় কী হচ্ছে, তা জানার সুযোগ পাই। পাশাপাশি কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফটে হাতে–কলমে আমরা বিভিন্ন কাজ শেখার সুযোগও পাই।’
বর্তমানে সাতটি বিষয়ে স্নাতক ও চারটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই পরিবারের সদস্যসংখ্যা অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ছোট বলেই হয়তো এখানে বন্ধনটা বেশি। সবুজ প্রাঙ্গণটি শিক্ষার্থীদের ভীষণ প্রিয়।
কথা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনীন্দ্র কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন গবেষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, সেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি আপ্রাণ। নানা ধরনের বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে আমরা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিচ্ছি।’