মাসল গেইন বা পেশি গঠনের জন্য কেমন খাবার খাবেন
মেদহীন, পেশিবহুল আকর্ষণীয় দেহকাঠামো অনেকেরই কাম্য। কেউ নিয়মিত যাচ্ছেন জিমে, কেউবা বাসায়ই গড়ে তুলেছেন অনুশীলনের পরিবেশ। কিন্তু শুধু শরীরচর্চা বা ঘাম ঝরালেই হবে না, পেশি গঠনের জন্য প্রয়োজন সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস।
সুস্থ ও সুগঠিত দেহ গঠনে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রোটিন, জটিল কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পেশি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ব্যায়ামের পর শরীরের ধকল দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
আমিষজাতীয় খাবার (পেশি গঠনের মূল উপাদান)
১. চর্বিমুক্ত মাংস: মুরগির বুকের মাংস, টার্কি, চর্বি ছাড়া গরুর মাংস ও যেকোনো সামুদ্রিক মাছ প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। এসবে পাবেন উচ্চমাত্রার অ্যামিনো অ্যাসিড, আয়রন ও ভিটামিন বি১২, যা পেশি গঠনে সহায়ক।
২. ডিম: পূর্ণাঙ্গ প্রোটিনের উৎস। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড এতে বিদ্যমান। আরও পাবেন ভিটামিন ডি ও স্বাস্থ্যকর চর্বি।
৩. দুগ্ধজাত পণ্য: গ্রিক ইয়োগার্ট ও কটেজ চিজে থাকে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ক্যাসেইন, যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেশি পুনর্গঠনে সহায়তা করে, বিশেষত রাতের ঘুমের সময়।
৪. উদ্ভিজ্জ প্রোটিন: ডাল, শিম, সয়াবিন ও টোফু নিরামিষভোজীদের জন্য কার্যকর প্রোটিনের উৎস। এসব খাবার প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার ও খনিজ সরবরাহ করে।
জটিল কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা (দীর্ঘস্থায়ী শক্তির জোগানদাতা)
১. হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য: লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, কিনোয়া কিংবা ওটস ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং জটিল শর্করা গ্লাইকোজেন পূরণে সাহায্য করে, যা ব্যায়ামের জন্য অত্যাবশ্যক।
২. ফল ও সবজি: প্রোটিনসমৃদ্ধ না হলেও এসবে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। তাই কোষ মেরামত ও পেশির ক্ষয় রোধে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড (হরমোনের স্বাভাবিকতা ও পেশি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ)
১. ফ্যাটি ফিশ (মজুত ওমেগা৩): প্রদাহ হ্রাস করে ও পেশির ব্যথা কমায়।
২. জলপাই তেল: স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা পেশির কার্যকারিতা ও শক্তি ধরে রাখতে সহায়ক।
৩. বাদাম ও বীজ: কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া ও তিসির বীজে পাবেন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট।
পেশি গঠনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক
প্রোটিন গ্রহণ: প্রতিদিন র্পযাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করুন। দেহের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ১.২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই প্রোটিন যেন দিনের বিভিন্ন বেলায় বিভক্ত হয়ে গ্রহণ করা হয়, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের পরও কিছুটা প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি।
ক্যালরিও প্রয়োজন: পেশি বৃদ্ধির জন্য শরীরকে বাড়তি ক্যালরি সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ওজন কমানোর ভাবনায় খুব কম ক্যালরি গ্রহণ করনে, তাহলে আপনার পেশি গঠন ঠিকঠাক হবে না।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়া: শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা পেশির কার্যকারিতা ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার: প্রয়োজনে প্রোটিন পাউডার গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী।
শেষ কথা
শুধু ব্যায়াম নয়, সঠিক, পরিমিত ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসই সুগঠিত পেশির চাবিকাঠি। যাঁরা সুস্থ, ফিট ও শক্তিশালী শরীর গঠন করতে চান, তাঁদের উচিত প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ওপরের উপাদানগুলো যুক্ত করা।