মাটির জিনিস তৈরি করে আয় করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির জিনিস তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

নাসির আলম পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। বিভাগ—মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য। বিভাগে পড়াশোনার জন্যই মাটি দিয়ে বিভিন্ন ভাস্কর্য বা টেরাকোটার কাজ করতে হয়। হঠাৎ করেই নাসিরের ব্যতিক্রমী কাজগুলো একজন শিক্ষকের নজর কাড়ে। তিনি পরামর্শ দেন, ‘তোমার মতো আরও যারা ভালো কাজ করছ, নিজেরা মিলে একটা স্টুডিও করছ না কেন?’ এভাবেই জন্ম নেয় ‘ক্লে ক্লাব’। সেটা ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

একসময় দেশে মাটির জিনিসের বেশ কদর ছিল। জীবনধারায় পরিবর্তনের কারণে এখন মানুষের রুচিবোধ বদলেছে। মাটির বাসনকোসনের বদলে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্রের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ‘মৃৎশিল্প’ যখন হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদেই তৈরি করছেন মাটির জিনিসপত্র।

শিক্ষার্থীদের করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল

শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৬০০-৭০০ টাকা দিয়ে। পালদের থেকে মাটি নিয়ে এসে নিজেরাই তৈরি করতেন দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা কিছু। পাশাপাশি করতেন টেরাকোটা ও ম্যুরালের কাজ। এখন ক্লে ক্লাবের সদস্যদের কাজের পরিধি বেশ বড় হয়েছে। ডিনার সেট, চায়ের কাপের সেট, মগ, বাটি, বিভিন্ন জার, পটারি, নানা কিছু তৈরি করেন তাঁরা। শুরুর দিকে তেমন বিক্রি না হলেও এখন মোটামুটি ভালোই আয় হচ্ছে। কাজ শেখার পাশাপাশি ছাত্রাবস্থায়ই মাসিক আয়ের একটা পথও তৈরি হয়ে গেছে।

নাসির আলম বলেন, ‘স্টুডিও শুরু করাটা আমাদের জন্য এতটাও সহজ ছিল না। কারণ, আমরা কাজটা করেছি করোনা মহামারির সময়। তখন সারা দেশে নানা রকম বাধ্যবাধকতা ছিল। আমাদেরও অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তবে এখন আমরা অনেক ভালো অবস্থায় আছি। আর কোনো সমস্যা নেই।’

এসব তৈজসপত্রের জিনিস বিদেশ থেকেও আসছে ফরমাশ
ছবি: সংগৃহীত

ক্লে ক্লাবে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবাই যেহেতু এখনো শিক্ষার্থী, তাই প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাসে হাজির থাকতে হয়। এসবের মধ্যেই স্টুডিওতে সময় দিতে তাঁদের সমস্যা হয় না। কারণ, ক্লাসে যা পড়ালেখা হয়, ক্লে ক্লাবের কাজও অনেকটা তা-ই। বরং ক্লাসে পড়া শেষে স্টুডিওতে তাঁরা অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন। এতে লাভ হচ্ছে আরও। বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে সন্ধ্যায় তাঁরা মৃৎশিল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এত পরিশ্রম বৃথা যাচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকে ফরমাশ আসছে, পরিচিতিও পাচ্ছে ক্লে ক্লাব। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার পেছনে কাজ করছেন, এটিও শিক্ষার্থীদের কাছে বড় আনন্দের কারণ।

স্টুডিওর সদস্যদের সবাই মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় তাঁরা মনে করেন এই চর্চার মাধ্যমেই নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। চাকরি না করে বরং নিজেরা একটা কিছু করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন তাঁরা।