২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কেন এই কলেজকে ‘বাংলার আলিগড়’ বলা হয়

কলেজমাঠে জমে শিক্ষার্থীদের আড্ডা
ছবি: প্রথম আলো

করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান ১৯২৬ সালে তাঁর দাদার নামে প্রতিষ্ঠা করেন সা’দত কলেজ। বলা হয় বাংলায় এটিই কোনো মুসলিম জমিদারের গড়া প্রথম কলেজ। প্রায় শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি আজও টাঙ্গাইল অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামই হয়ে গেছে ‘বাংলার আলিগড়’।

শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সা’দত কলেজের অবস্থান। ৩০ নভেম্বর কলেজ প্রাঙ্গণে পা রেখে দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলছে স্নাতক সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। অন্য কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সিট এখানে পড়েছে। সা’দত কলেজের শিক্ষার্থীরাই অন্য কলেজের পরীক্ষার্থীদের আসন খুঁজে পেতে সাহায্য করছিলেন।

পরীক্ষা চলছে বলে ক্লাস বন্ধ। তবে কলেজের মাঠ আর ছাত্রাবাসের আশপাশে কয়েকজনের দেখা মিলল। গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কলেজের পরিবেশটা খুব সুন্দর। তাই ক্লাস না থাকলেও সময় পেলে চলে আসি। এত বড় মাঠ! বসে থাকতেও ভালো লাগে।’

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন্দমোহন দে জানান, এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ইবরাহীম খাঁ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে টানা ২১ বছর তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে সারা দেশে তিনি ‘প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ’ নামে পরিচিতি পান। তাঁর হাতেই কলেজটি গড়ে ওঠে।

প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যেই চালু হয়েছিল স্নাতক শ্রেণি। বর্তমান মূল ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। ১৯৩৯ সালে স্থাপন করা এই ভবনেই এখনো চলছে মূল কার্যক্রম। ইবরাহীম খাঁর পর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আরও অনেক গুণী শিক্ষাবিদ। প্রখ্যাত লোকগবেষক তোফায়েল আহম্মেদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ষাটের দশকে তাঁর হাতেই এই কলেজে চালু হয় স্নাতক সম্মান কোর্স। পরে ১৯৭৪ সালে চালু হয় স্নাতকোত্তর কোর্স। ১৯৭৯ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ২৫ হাজার। ১৯৯৬ সালে কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি তুলে দেওয়া হয়েছিল।

সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ততা

সা’দত কলেজে শিল্পলোক, আবৃত্তি সংসদ, বিতর্ক ক্লাব, বিএনসিসি, যুব রেড ক্রিসেন্ট, রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনসহ নানা সংগঠনের কার্যক্রম চালু আছে। এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বর্ষবরণ, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীসহ বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে নিয়মিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিতর্ক ক্লাবের সদস্য সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা মেহের জানান, যুক্তিভিত্তিক প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী তাঁদের নানা আয়োজন থাকে। সাংস্কৃতিক চর্চাকে উৎসাহিত করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি ভবন ছেড়ে দিয়েছে। সেই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলার একটি কক্ষে চলছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন ‘বাঁধন’-এর কার্যক্রম।

আরও পড়ুন

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম জানান, ২০০১ সাল থেকে কলেজে তাঁদের কর্মসূচি চলছে। প্রতি মাসে ১২০ থেকে ১৫০ ব্যাগ পর্যন্তও রক্ত দেন তাঁরা।

গৌরবময় ঐতিহ্য

লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ভাষা সৈনিক শামছুল হক ছিলেন এই কলেজের ছাত্র সংসদের প্রথম সহসভাপতি (ভিপি)। যাঁরা শিক্ষকতা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বাবা আজিম উদ্দিন আহমেদ, হিসাববিজ্ঞানের বহু বইয়ের লেখক নাজির আহমেদ উল্লেখযোগ্য।

কলেজে আছে ৩০ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বিশাল খেলার মাঠ, পুকুর, শহীদ মিনার, গাছগাছালি মিলিয়ে শহর থেকে দূরে এক শান্ত, সুনিবিড় পরিবেশ। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পরিবহনের জন্য পাঁচটি বাস ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ১৩০। এই কলেজে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর স্মৃতিতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে নজরুল কুটির নামের একটি বিশ্রামাগার।

বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন সুব্রত নন্দী। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে সা’দত কলেজের বড় ভূমিকা আছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আধুনিক কর্মবাজারের সঙ্গে, পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর জন্য আমরা নিয়মিত বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করি।’