এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে খুব বিচলিত হয়ে পড়েন মাজহারুল ইসলাম। ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলাম নগর গ্রামে তাঁর বাড়ি। ব্যবসায়ী মানুষটা একদিন শহরে গিয়ে সাদা থান কাপড় কিনে আনেন। বাসায় এসে স্ত্রীর হাতে কাপড়টা দিয়ে বলেন, ‘চারদিকের যে অবস্থা, মরে গেলে কাফনের কাপড়টাও এখন জুটবে না, তাই কিনে আনলাম।’
সে সময়ের করুণ গল্প শুনেছিলাম মাজাহারুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা খাতুন আর ছেলে আবু সাঈদের কাছে। তাঁরা জানান, এরপর মাজহারুল ইসলাম স্ত্রীকে দেনমোহর বাবদ তিন হাজার টাকা দেন। তখনো তিনি বলেন, ‘হায়াত-মউতের কথা বলা যায় না। দেনমোহর শোধ করে দিলাম। ভুলত্রুটি থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।’
৫২ বছর পর বাবাকে খুঁজে পেলাম
তার কয়েক দিন পর সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি সেনারা ইসলাম নগর ঘেরাও করে। মাজহারুল ইসলামের বাড়িসহ অনেকের বাড়ি লুটপাট করে। দেনমোহরের টাকাও নিয়ে যায়। গ্রামের কয়েকজনকে হত্যাও করে তারা। ফিরে যাওয়ার সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের হাতে ১৫ জনের নামের তালিকা দিয়ে যায়। তাঁদের দেখা করতে বলা হয়। ভয়ে তখনই তালিকার সাতজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।
তবে থেকে যান মাজহারুল ইসলামসহ তালিকার অন্যরা। ২০ মে সকালে তাঁরা গরুর গাড়িতে করে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে যান। সেদিন গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে আটজনকে গরুর গাড়িতে তুলে দেন। বিকেলে ক্যাম্প থেকে গরুর গাড়িসহ গাড়োয়ান ফিরে এলেও থেকে যান আরোহীরা। তাঁরা আর কোনো দিন ফেরেননি।
মাজহারুল ইসলামের কিনে আনা কাফনের কাপড়টি তাঁর পরিবার যত্ন করে আগলে রেখেছিল। এখন প্রদর্শিত হচ্ছে গণহত্যা জাদুঘরে।