মীম আর নুনকে আজও ভুলতে পারিনি, জানি না, ওরা কত বড় হয়েছে

পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন এক ভদ্রমহিলা, তাঁর দুই মেয়ে—মীম আর নুনগ্রাফিকস: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের কাছেই ফতুল্লার একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন এক ভদ্রমহিলা, তাঁর দুই মেয়ে—মীম আর নুন। মীমের বয়স তখন সাত বছর, নুনের পাঁচ। তাদের বাবা একটি সরকারি দপ্তরে কাজ করেন।

আমরা পাশাপাশি থাকতাম। ভদ্রমহিলাকে আমি ভাবি বলে ডাকতাম। ভাবি তাঁর জীবনের সব কথা আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। এমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল যে আশপাশের অনেকে মনে করত আমরা দুই বোন। একদিন আমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেতেন। যাই খেতেন, আগে আমাকে না দিয়ে মুখে তুলতেন না। মীম আর নুনও সারাক্ষণ ডাকত, ‘তাজিয়া আন্টি, তাজিয়া আন্টি!’ মাঝেমধ্যে ওদের পড়ালেখাতেও সাহায্য করতাম।

সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল, ভাবির ব্লাড ক্যানসার। নয় মাস পরপর তাঁকে রক্ত দিতে হতো।

আরও পড়ুন

দুই বছর পর আমি অন্য বাসায় চলে যাই, যদিও খুব দূরে নয়। হঠাৎ একদিন খবর এল, ভাবি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সেদিন অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। মৃত্যুশয্যায় বসে তিনি আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন আমাকে জানানো হয়নি। মীম-নুনও ছোট; ওদের পক্ষে বলা সম্ভব হয়নি। সেদিনই ছিল ভাবির জীবনের শেষ দিন। রাত তিনটার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভোর পাঁচটায় খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই। ঘরে নিথর হয়ে পড়ে আছে ভাবির দেহ। মীম আর নুন পাগলের মতো কাঁদছে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে নিজেই ভেঙে পড়ি। ১৫ বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।

এরপর আমি বরিশালে চলে আসি। ধীরে ধীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তো ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন ছিল না। কিন্তু মীম আর নুনকে আজও ভুলতে পারিনি। কোনো রক্তের সম্পর্ক না, তার চেয়েও গভীর এক অপার ভালোবাসার বন্ধন।

জানি না, ওরা কত বড় হয়েছে! হয়তো আমাকে চিনবেও না, মনে রাখেনি বহু বছর আগের কথা। তবু আমার স্মৃতিতে ওরা অমলিন। মাঝেমধ্যে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভেতরটা কেঁপে ওঠে।

মীম আর নুনের জন্য অফুরন্ত দোয়া ও ভালোবাসা।

আরও পড়ুন

আপনিও লিখুন

প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

প্র ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন

২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫

ই-মেইল: [email protected]

ফেসবুক পেজ: fb.com/ChutirDine

খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।

আরও পড়ুন