নিজ উদ্যোগে গবেষণা শিখেছেন, সেই সুবাদেই সামিয়া এখন অক্সফোর্ডে
সামিয়া ইসলামের ছোটবেলা কেটেছে সাভারে। খুব যে ভালো ছাত্রী ছিলেন, তা নয়। বরং খেলাধুলা আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোটাই বেশি উপভোগ করতেন। কিন্তু হাইস্কুলে ওঠার সময় তাঁর মধ্যে একটি পরিবর্তন আসে। বুঝতে শেখেন, শুধু খেলা বা ফাঁকি দিয়ে জীবনে সফল হওয়া যাবে না। রাতভর পড়াশোনা শুরু হয় তখন থেকেই। সামিয়া স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি পড়াশোনায় একদমই ফাঁকিবাজ ছিলাম। তবে হাইস্কুলে বুঝতে শিখেছি যে পরীক্ষায় ভালো গ্রেড না আনলে পরের সেমিস্টারটা পার করা কঠিন। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল রাতভর পড়ার অভ্যাস।’ সেই অভ্যাস তাঁকে নিয়ে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ পর্যন্ত। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সামিয়ার আগ্রহ গণিত ও সামাজিক বিজ্ঞানে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ঠিক জমছিল না।
অগত্যা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। সেখান থেকেই শুরু তাঁর নতুন জীবন। পছন্দের বিষয়ে পড়তে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসা যে ভুল ছিল না, প্রমাণ হয় তখন, যখন তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ বৃত্তিসহ পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সামিয়া।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন ততটা সহজ ছিল না। অনার্স-মাস্টার্স দুটোতেই থিসিস ছিল না। তবে সামিয়া থেমে থাকেননি। নিজ উদ্যোগে গবেষণা শিখেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং কনফারেন্স পেপার প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘থিসিস না থাকায় আমাদের রিসার্চ এক্সপোজার কম ছিল। তবে নিজ উদ্যোগে কাজ শিখেছি বলেই হয়তো আমার আবেদনটা আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।’
স্নাতকজীবন থেকেই অর্থনীতিসংক্রান্ত কাজ খুঁজছিলেন সামিয়া। সুযোগ পেলে ছোটখাটো ইন্টার্নশিপ করেছেন। গবেষণা প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। এসব অভিজ্ঞতাই তাঁকে সাহায্য করেছে।
সামিয়া বলেন, ‘সানেমে ইন্টার্নশিপ করার অভিজ্ঞতা আমার প্রোফাইল ভারী করেছে। পড়াশোনা, রিসার্চ, নেটওয়ার্ক—সবকিছু মিলিয়েই প্রোফাইল তৈরি হয়েছে।’
বৃত্তির জন্য আলাদা আবেদন করতে হয়নি তাঁকে। শুধু আবেদন ফরমে উল্লেখ করেছিলেন, বৃত্তি দরকার। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর জন্য সম্ভাব্য বৃত্তি খুঁজে দিয়েছে। সামিয়া পেয়েছেন ক্লারেন্ডন স্কলারশিপ। মেধার ভিত্তিতে প্রতিবছর এমডিফিল ইন ইকোনমিকস প্রোগ্রামের একজন শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি দেওয়া হয়।