বাংলাদেশে থাকা বিদেশিদের অনেকেই ২১ ফেব্রুয়ারি পরেন সাদা-কালো পোশাক। এ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ‘নকশা’র প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছিল ‘সাদা-কালোর ধারায়’ শিরোনামে। এ প্রতিবেদনের জন্য মডেল হয়েছিলেন সে সময় বাংলাদেশে বেড়াতে আসা ইউক্রেনের মডেল লুবোভ। পরশু লুবোভ তাঁর ফেসুবক অ্যাকাউন্টে একটি অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও দিয়ে লিখেছিলেন, ‘রুশরা কিয়েভ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি খামারের ওপর বোমা ফেলেছে। এ থেকে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। ধোঁয়া আর ক্ষতিকর উপাদান বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে...’

সাদা–কালো সালোয়ার কামিজটি বেশ পছন্দ করেছিলেন তিনি

লুবোভের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গতকাল আমাদের সহকর্মী মো. সাইফুল্লাহকে জানালেন, ইউক্রেনের বহু নাগরিকের মতো তিনিও দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি বিমানে উঠতে পেরেছিলেন, তবে সেই বিমানও মাঝপথ থেকে ফেরত এসেছে। আজ সকালে সর্বশেষ যখন তাঁর সঙ্গে কথা হলো, বিমানবন্দরে বসে মেসেঞ্জারে তিনি লিখেছেন, ‘নো টিকিটস, নো প্ল্যান।’

সাদা-কালো রঙের প্রতি দুর্বলতা আছে লুবোভের

‘নকশা’র ছবি তোলার সময় জানিয়েছিলেন নিজের অনুভূতির কথাও। জীবনে সেবারই প্রথম শাড়ি পরেছিলেন। সেজেছিলেন বাঙালি পোশাকে। বলেছিলেন, ‘এই থিমের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মিল আছে শুনেই আমি কাজটা করতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পুরো অবদানই তো বাংলাদেশের! অন্য পোশাকের সঙ্গে শাড়ি পরে মডেল হয়েছি, এটা ছিল আমার জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এত লম্বা একটা কাপড় কীভাবে পরা হয়, সেটা এখনো আমার কাছে বিস্ময়ের। এ ছাড়া সাদা-কালো রঙের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। এ দুটি আমার প্রিয় রং।’

এ শহরের যানজট নিয়ে বিরক্ত না হয়ে বেশ মজা পেয়েছিলেন। ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, যানজটের শহর ঢাকায় বিশাল এক হাতির পিঠে মাহুত ঘুরে বেড়াচ্ছে, আচমকা এমন দৃশ্য তিনি আগে কোথাও দেখেননি। লুবোভ ঘুরেছেন অনেক দেশেই। তাই তাঁর ‘দেখা’ পৃথিবীটা ছোট, এমনটাও নয়। বাংলা ভাষাও শিখছিলেন তিনি। ভাঙা বাংলায় বলেছিলেন, ‘কড়ছি, কড়েছি, কড়েছিলাম!’

নিজের ভাষাকে ভালোবাসেন লুবোভ

ইউক্রেনিয়ান ভাষাটা খুব সুরেলা বলে জানিয়েছিলেন লুবোভ। ছোটবেলায় এই ভাষায় অনেক গল্প লিখেছেন। নিজের ভাষাকে ভালোবাসেন তিনি। ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিক ভাষা ইউক্রেনিয়ান। কিন্তু সেখানে রুশ ভাষার প্রভাব বেশি। ক্রিমিয়ায় লুবোভের সমবয়সী বন্ধুরা তাঁর ইউক্রেনিয়ান ভাষা শুনলে অবাক হন। কারণ, তাঁরা কথা বলেন রুশ ভাষায়। কিন্তু নিজের দেশের ভাষা বলে লুবোভের কাছে ইউক্রেনিয়ানটাই প্রিয়। বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়েছিলেন ক্রিমিয়ার অধিবাসী। লুবোভের ভাষাকে কিন্তু ভালোবাসার ভাষাও বলা যায়। রুশ ‘লুবোভ’ শব্দের অর্থই ভালোবাসা!

প্রথমবারের মতো শাড়ি পরেছিলেন