শেফালি জরিওয়ালার মৃত্যুতে অ্যান্টি-এজিং ওষুধকে কেন দায়ী ভাবা হলো? কী বলছেন চিকিৎসক?

অনেকেই তো বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-এজিং পদ্ধতি অবলম্বন করেন। বড়সড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর খুব একটা শোনা যায় না। তাহলে বলিউড অভিনেত্রী শেফালি জরিয়াওয়ালার মৃত্যুর পর কেন এই প্রশ্ন উঠছে? আদতেই কি এসব পদ্ধতি পুরোপুরি নিরাপদ নয়?

শেফালি জরিওয়ালাছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বয়স বাড়লেও চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন অনেকেই। বেছে নেন নানান পদ্ধতি। অ্যান্টি-এজিং ক্রিম তো বটেই, তারুণ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার প্রচলনও আছে। বোটক্স ইনজেকশনও নেন কেউ কেউ। বলিউড অভিনেত্রী শেফালি জরিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুর পর আলোচনায় এসেছে অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসাপদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান

হরমোনসমৃদ্ধ ওষুধ

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের তারতম্য হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কখনো কখনো হরমোনসমৃদ্ধ ওষুধ সেবন করা হয়। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। হাড়ক্ষয়, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে এ ধরনের ওষুধ। হুট করে এসব ওষুধ বন্ধ করলে রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ কোনোক্রমেই সেবন করা উচিত নয়।

অন্যান্য ওষুধ

হরমোনসমৃদ্ধ ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য ধরনের অ্যান্টি-এজিং ওষুধ আছে বাজারে, যা মূলত কোনো পুষ্টি উপাদানের সাপ্লিমেন্ট। এসব ওষুধ পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে সাধারণত তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কোনো কোনো ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এমনকি একটি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ গ্রহণ করলেও কখনো কখনো সমস্যা হতে পারে, যদি এর পাশাপাশি কোনো রোগের কারণে বিশেষ কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। তাই অন্য কোনো ওষুধ চলাকালীন যদি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ সেবন করতে হয়, তাহলে তা অবশ্যই আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে।

আরও পড়ুন

অ্যান্টি-এজিং ইনজেকশনের বিষয়ে সতর্কতা

যেকোনো ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া উচিত। ভুলভাবে ইনজেকশন নেওয়া হলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তারুণ্য ধরে রাখতে বোটক্স ইনজেকশন বেশ জনপ্রিয়। তবে এই ইনজেকশন প্রয়োগের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে কারও কারও ঠোঁট কিংবা ভ্রু বাঁকা হয়ে যায়, চোখের পাতা নেমে যায়। তাই প্রশিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া কারও কাছে এ ইনজেকশন নেবেন না। আর এটাও মনে রাখবেন, বোটক্স কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

ক্রিম ব্যবহারেও সতর্কতা

অ্যান্টি-এজিং ক্রিমেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বকের শুষ্কতা, লালচে ভাব ও অস্বস্তির কারণ হতে পারে এ ধরনের ক্রিম। কিছু ক্রিম রোদে সংবেদনশীলতা বাড়ায়। কিছু ক্রিম ত্বককে পাতলা করে ফেলে। বিশেষত নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছনোর আগে অ্যান্টি-এজিং ক্রিম ব্যবহার করা হলে ক্ষতি হয় অনেক বেশি। তাতে ত্বক আরও দ্রুত বুড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন

মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবা হলো কেন

যত ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানলেন, তার কোনোটিতেই মৃত্যুঝুঁকি নেই। তবু কেন শেফালি জরিওয়ালার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অ্যান্টি-এজিং ওষুধের কথা ভাবা হলো? সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৃত্যুর দিন শেফালি উপবাস করেছিলেন। সে সময় তিনি অ্যান্টি–এজিং ইনজেকশন নিয়েছেন বলেও জানা গেছে, যদিও সেসব হরমোনজাতীয় ওষুধ ছিল না; ছিল ভিটামিন সি এবং গ্লুটাথিওন।

তবে সারা দিন না খেয়ে থাকলে ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যেতে পারে। সে অবস্থায় ভিটামিনজাতীয় ইনজেকশন নিলে হৃৎপিণ্ডের গতি বাধা পেতে পারে। তাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে এসব ওষুধের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও যেকোনো ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা আবশ্যক।

আরও পড়ুন