বয়স ৫০ পেরোলে শরীরের শক্তি বাড়াতে যেসব খাবার খাবেন
বয়স ৫০ পেরোলেই শরীরে আসে নানা পরিবর্তন। এ কারণে পরিবর্তন চলে আসে খাওয়াদাওয়ায়ও। ৪০ বছর পার হলেই অনেকে বলেন, এখন ডাল-ভাত আর ভর্তাই ভালো লাগে; কাচ্চি বিরিয়ানি, পাস্তা বা কফি অতটা টানে না। শারীরিক এই পরিবর্তনে মন খারাপ করার কিছু নেই। বয়স অনুযায়ী খাবার খেলে আরও ২০-৩০ বছর কর্মঠ থাকা যায়। কিছু খাবার এই বয়সে শরীরকে ক্লান্ত করে ফেলে, শক্তিও কমে যায়। তাই শক্তি ধরে রাখতে হলে অভ্যাস বদলানো খুব জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষক হারম্যান পন্টজারের নেতৃত্বে ৬ হাজার ৪০০ জনকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়সের পর মানুষের মেটাবলিজম অর্থাৎ খাবার থেকে শক্তি আহরণের গতি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। এ বয়সে শরীর খাবার হজম করতে সময় নেয় বেশি। একই সঙ্গে সেই খাবার থেকে শক্তি পাওয়াটাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, ৩০ বা ৪০ বছর বয়সে যেভাবে যেসব খাবার খাওয়া হয়, সেই অভ্যাস ৫০ বছর পার হলেই শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পুনরুদ্ধার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে শুরু হয় নানা সমস্যা। কারণটা আগেই বলা হয়েছে, মেটাবলিজম কমে যাওয়া। কার্বোহাইড্রেট ঠিকভাবে হজম না হওয়ায় ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়তি থাকে। তারপর আবার হঠাৎ কমে গিয়ে মাথা ঝিমঝিম ভাব, ক্লান্তি আর তন্দ্রার ভাব চলে আসে। এ কারণেই ৫০ পার হলে খাবারও হওয়া উচিত সে অনুযায়ী।
যেসব অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত
একবারে বেশি খাওয়া: একবারেই বেশি পরিমাণে খাবার খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় চাপ পড়ে। এতে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, শক্তিও কমে যায়।
বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার: ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া বা চর্বিযুক্ত খাবার শরীরকে ভারী করে তোলে, শক্তিও কমে যায়।
চিনি ও মিষ্টিজাত খাবার: সোডা, মিষ্টি সিরিয়াল বা প্রক্রিয়াজাত খাবার হঠাৎ ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত চা-কফি: ক্যাফেইন শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য চাঙা করে তোলে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে দিনের বেলা ক্লান্তি ভাব আসে। এ ছাড়া সোডা, কোমল পানীয় বা বোতলজাত মিষ্টি জুস শরীরকে দ্রুত চাঙা করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নামিয়ে আনে শক্তির স্তর। এই শর্করা-নির্ভর পানীয়গুলো শরীরকে হাইড্রেট করার বদলে ধীরে ধীরে ক্লান্ত করে তোলে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: সাদা পাউরুটি, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদিতে ফাইবার ও পুষ্টি কম থাকে। এসব খেলে পেট দ্রুত খালি হয়ে যায় এবং শক্তি কমে যেতে পারে।
ভালো অভ্যাসে বাড়বে শক্তি
ছোট ছোট ভাগে বারবার খাওয়া: দিনে ৩ বেলার বদলে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা এবং শক্তি বজায় থাকে। সকালে নাশতা খাওয়া অনেকটাই বাধ্যতামূলক। পেট খালি রেখে দিন শুরু করলে মেটাবলিজম আরও কমে যায়। বিকেলের দিকে বাদাম, ফল, টক দইয়ের সঙ্গে কম মিষ্টি ফল, সবজি সালাদ, একটা সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। এ বয়সের খাবার তালিকা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই ঠিক করুন।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, ডিম রাখুন খাবারের তালিকায়। সাদা চালের বদলে বাদামি চাল বা অন্যান্য হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য বেছে নিতে পারেন। ডাল, শাক, ছোলা, ফল ও গোটা শস্য হজমশক্তি ভালো রাখে, রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়। অন্যদিকে অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আলঝেইমার্স ডিজিজ বা ডিমেনশিয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সপ্তাহে ২-৩ দিন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন ইলিশ, রুই, টুনা, স্যামন ইত্যাদি। কিছু উদ্ভিজ্জ খাবারেও আছে এই উপকারী চর্বি, যেমন আখরোট, চিয়া বীজ, তিসি বীজ ও হেম্প সিড।
পানি খান: বয়স বাড়লে তৃষ্ণাবোধ কমে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় পানিশূন্যতার কারণে পেশি ও রগে টান পড়ে, পায়ে ব্যথা হয়। দিনের শুরু থেকেই পানি খান। হাতের কাছে সব সময় পানির বোতল রাখার চেষ্টা করুন। চিনি ছাড়া গ্রিন-টি বা হারবাল চা খেতে পারেন। রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়া: রাত ১০টায় ভাত-মাংস খেয়ে ঘুমাতে গেলে শরীর পুনরুদ্ধারের কাজ ঠিকমতো হয় না। ঘুমও হয় খারাপ। তাই চেষ্টা করুন রাত সাড়ে আটটার মধ্যেই খেয়ে নিতে।
‘ফিফটি ইজ দ্য নিউ থার্টি’-জনপ্রিয় এই কথার মানে দাঁড়ায়, আজকের দিনে ৫০ বছর বয়স মানেই আর ‘বুড়ো’ হয়ে যাওয়া নয়। বরং অনেকেই এ বয়সে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও স্বাস্থ্যবান, আরও সক্রিয়, মানসিকভাবে অনেক বেশি তরুণ। সেটা একদম অসম্ভব কিছু নয়। হালকা, পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খেয়েই জীবনযাপন করতে পারবেন প্রাণবন্তভাবে।
সূত্র: মিডিয়াম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অবহেলথ, ইটিং ওয়েল