খুশকি ফিরে আসে বারবার? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো মানুন
হেমন্তের এই সময়েই শীতের আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ। এমন শুষ্ক মৌসুমে ত্বক ও চুলের সুস্থতার জন্য কিছুটা বাড়তি যত্ন চাই-ই চাই। খুশকি এ সময় এক বিরাট ঝক্কি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর সমাধান ও প্রতিরোধে কী করবেন, জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
খুশকি দেখা দিতে পারে কয়েকটি ভিন্ন ধরনের রোগে। অর্থাৎ সবার ক্ষেত্রে খুশকির কারণ এক নয়। চিকিৎসাপদ্ধতিও আলাদা। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে চিকিৎসা নিলে জটিলতা বাড়তে পারে।
আরও মনে রাখতে হবে যে খুশকি প্রতিরোধে জীবনধারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুশকির কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সিনথিয়া আলম।
খুশকির কারণ ও ধরন
সাধারণত যে ছোট সাদা গুঁড়ার মতো খুশকি দেখা যায়, তা সেবোরিক ডারমাটাইটিস রোগে হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু (২ শতাংশ কিটোকোনাজল শ্যাম্পু) দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
তবে এই শ্যাম্পু আবার রোজকার ব্যবহার্য নয়। তিন দিন অন্তর ব্যবহার করতে হয়। শরীরের অন্যান্য স্থান, যেখানে হেয়ার ফলিকল আছে, সেখানেও হতে পারে সেবোরিক ডারমাটাইটিস।
সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাথার ত্বক থেকে আবার কিছুটা পুরু সাদাটে আস্তর উঠে আসতে দেখা যায়। নিজে থেকে এসব ওঠানোর চেষ্টা করলে ছোপ ছোপ রক্তও আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে শ্যাম্পু, অয়েন্টমেন্ট, স্প্রে বা অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়, সেসব একেবারেই আলাদা ধরনের।
সেবোরিক ডারমাটাইটিস ও সোরিয়াসিস—এই দুই ধরনের রোগে খুশকির যে ধরন, সেই দুটিই দেখা দেয় আরেক ধরনের সমস্যায়। একে বলা হয় সেবোসোরিয়াসিস।
খুশকি দেখা দিলে আগে এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ অনুযায়ীই করতে হবে চিকিৎসা। তবে চিকিৎসার পরেও জীবনধারা স্বাস্থ্যকর না রাখার কারণে খুশকি ফিরে আসতে পারে বারবার।
সুস্থ থাকতে করণীয়
খুশকি ফিরে আসা প্রতিরোধে জীবনধারা হতে হবে স্বাস্থ্যকর। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া আবশ্যক। মাথার ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। রোজ তাই শ্যাম্পু করতে হবে। তবে বাজারের ‘মেন্থলযুক্ত’ হিসেবে দাবি করা অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়।
তেল এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। ধুলাবালুতে গেলে মাথা ঢেকে রাখুন। তবে মাথা ঢাকার জন্য এমন ধরনের সুতি কাপড় বেছে নিন, যার ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে ঠিকঠাক। আর ঘণ্টা দুয়েক পরপর মাথার কাপড় সরিয়ে বাতাস ঢোকার সুযোগ করে দিতে হবে।
মাথা বা চুলের গোড়া ঘেমে গেলে বা ভিজে গেলে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। চুলে প্যাক ব্যবহার করলে মাথার ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার করার বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে দুবার শ্যাম্পু করে হলেও মাথার ত্বক পুরোপুরি পরিষ্কার করতে হবে।
আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন
চুল ও মাথার ত্বকের সুস্থতায় বছরজুড়েই আরও কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি।
মাথার ত্বকের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নিন।
চিরুনি, ব্রাশ, বালিশের কভার প্রভৃতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
অতিরিক্ত গরম পানি মাথায় দেবেন না। রুম হিটারের খুব কাছে থাকবেন না।
সপ্তাহে এক দিন চুলের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। দুই টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। কিংবা সারা রাত ভিজিয়ে রাখা মেথি সকালে বেটে নিয়ে মাথার ত্বকে লাগানোর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
খুশকি হলে
খুশকি হলে সতেজ চুলের জন্য যা করতে পারেন—
শ্যাম্পু করার পর সমপরিমাণ পানি আর অ্যাপল সিডার ভিনেগারের মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
চাইলে অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।
নিমপাতা বেটেও মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।