প্রকৌশলী হওয়ার পর কেন আবার মেডিকেলে পড়ছেন তিনি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে আবার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন জুবায়ের হোসেন। বর্তমানে কিরগিজস্তানের কিরগিজ স্টেট মেডিকেল একাডেমিতে পড়ছেন।

কিরগিজস্তানের কিরগিজ স্টেট মেডিকেল একাডেমিতে পড়ছেন জুবায়ের হোসেন
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

প্রকৌশলের পর আবার মেডিকেলে পড়া কেন?

বুয়েটে আমার বিষয় ছিল তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল। স্নাতকের শেষ বর্ষ থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং–সম্পর্কিত কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করে ক্যানসার মার্কার বের করা যায়—এই কাজগুলো করেছি। মূলত, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করতে করতেই মেডিসিনের প্রতি আগ্রহ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেডিসিন ও প্রকৌশল—দুই বিষয়সংক্রান্ত পড়ালেখার সুযোগ নেই। তবে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় ডাবল ডিগ্রি নেওয়া সাধারণ ব্যাপার। কারণ, তারা চিকিৎসক-বিজ্ঞানী তৈরি করতে চায়। চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা প্রধানত স্বাস্থ্যসেবা–সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত উদ্যোগ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে সুযোগ নেই বলেই বিদেশে পড়তে আসা।

প্রথম আলো:

কোনো একাডেমিক জটিলতায় পড়তে হয়েছে?

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে আমাকে ‘এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট’ নিতে হয়েছে। এই সনদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ও-লেভেল এবং এ-লেভেলও দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

শুনেছি, একটা অ্যানাটমি প্রতিযোগিতাতেও আপনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

প্রতিযোগিতাটার নাম ছিল হিউম্যান মরফোলজি অ্যান্ড ডেসমার্জি। আমার জন্য বিষয়টি আরও আনন্দের, কারণ দলের নেতৃত্বভার ছিল আমার ওপর। কিরগিজস্তানের এই প্রতিযোগিতায় সাধারণত মধ্য এশিয়ার দেশের মেডিকেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। প্রধান বিষয় থাকে, বেসিক অ্যানাটমি, স্টেওলজি, প্যাথলজিক্যাল অ্যানাটমি ও ডেসমার্জি। এবার মোট ১৩টি দল অংশ নিয়েছিল। সবাইকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।

প্রথম আলো:

প্রকৌশলে পড়ালেখার পর মেডিকেলে পড়তে কেমন লাগছে?

মেডিসিনে পড়ালেখায় অনেক চাপ। পড়ে শেষ করা যায় না। আমি একটা প্রতিষ্ঠানে ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছি। বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা আর কাজের মধ্যেই চলে যায়। স্বাস্থ্যসেবা–সম্পর্কিত একটা অ্যাপও বানাচ্ছি আমরা। নাম দিয়েছি ‘স্বস্তি’। এখানে ব্যবহারকারী তাঁর প্রেসক্রিপশন, মেডিকেল রিপোর্ট ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেও যোগ করার ইচ্ছা আছে।

প্রথম আলো:

ডাবল ডিগ্রি আপনাকে কী সুবিধা দেবে?

এমন একটা গবেষণাপ্রতিষ্ঠান করতে চাই, যেখানে প্রিসিশন মেডিসিন নিয়ে কাজ হবে। প্রিসিশন মেডিসিন হলো এমন একটা পদ্ধতি, যেখানে রোগীর জিনগত বৈশিষ্ট্য বা জীবনযাপনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বিশেষায়িত ওষুধ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া ক্যানসারের মতো বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসুখের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। আমার যেহেতু আগে থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাই সেটাই কাজে লাগাতে চাই। উত্তর আমেরিকার কোনো দেশ থেকে প্রিসিশন মেডিসিন নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছাও আছে।