মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বেশ কবছর ধরে বই আকারে প্রকাশ করছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংগৃহীত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী–ভাষ্য’। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেই তাদের এই উদ্যোগ। জাদুঘরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচিতজনদের সঙ্গে আলাপ করে একাত্তরের স্মৃতি লিখিতভাবে পাঠায়। ফলে এই কর্মসূচি এক অর্থে বিনিময়। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস এবং শিক্ষার্থীরা জোগান দিচ্ছে ইতিহাসের নতুন উপাদান। শিক্ষার্থীদের পাঠানো এসব ভাষ্য থেকে বাছাই ৩১টি কাহিনি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রকাশ করছে প্রথম আলো

সংগ্রহকারী: বিপ্লব হোসেন, সপ্তম শ্রেণি (স্মৃতিকথা সংগ্রহের সময়), চুয়াডাঙ্গা একাডেমি, চুয়াডাঙ্গা

বর্ণনাকারী: মো. শামসুল হক, তালতলা, চুয়াডাঙ্গা

আমার বন্ধুর নাম ছিল মজনু
অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

আমার বন্ধুর নাম ছিল মজনু। তার কত আশা ছিল, বিয়ে করে বাবা হবে। ছেলের ছেলে হবে। কিন্তু তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে চোখ তাঁর বাধল, তারপর হাত বাঁধল, তারপর সে কেঁদে বলল, ‘আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ব।’

পাকিস্তানি বাহিনী মজনুকে নামাজ পড়তে দিল। নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই। মোনাজাত আর ছাড়তে চাইল না। পাকিস্তানি বাহিনী এসে বেয়নেট দিয়ে কোপ মেরে মজনুর হাতের তিনটি আঙুল কেটে দিল। তারপর ফেলে দিল টয়লেটের গর্তে।

আরও পড়ুন

তখনো কিন্তু মজনুর হাত–পা–চোখ বাঁধা। পাকিস্তানি বাহিনী কেবল তাঁকে গর্তে ফেলেই দিল না, গর্তের ঢাকনা দিয়ে চেপে ধরে রাখল।

মজনু মাথা দিয়ে ঢাকনা ঠেলে ওপরে তোলার চেষ্টা করে, তবু পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকনা তোলে না। মজনু সেখানেই মারা গেল।

আরও পড়ুন

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদল ছেলে মাঠে গরু রাখতে গিয়ে সেই টয়েলেটের গর্তের ঢাকনা তুলল। দেখল, সেখানে চোখ–হাত–পা বাঁধা মজনুর লাশ।

ছেলেরা মজনুর মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে এল। মা–বাবা এসে হাউমাউ করে কাঁদল। ছেলের লাশ গর্ত থেকে তুলে দাফন–কাফন করে মাটি দিল।

আরও পড়ুন