পড়ালেখা, থাকা–খাওয়ায় কোথায় কেমন খরচ, দেখুন আরও ১০ দেশের তথ্য
বিদেশে পড়ালেখার সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বেড়েছে পড়ালেখা ও জীবনযাত্রার খরচ। বিভিন্ন দেশের খরচের একটি তুলনামূলক চিত্র এখানে থাকল।
১. বেলজিয়াম
বেলজিয়ামে কলা, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পড়ার খরচ প্রায় সমান। শাহিন কবির সেখানে পড়েন। তিনি জানালেন, স্নাতকে বছর খরচ ৫-৯ হাজার ডলার (৬-১১ লাখ টাকা)। মাস্টার্সে কিছুটা কম। বছরে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার (১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১২ লাখ টাকা)। বেলজিয়ামের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে মাত্র একটি একাডেমিক সেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মাসিক খরচও অন্তত ১ হাজার ডলার। তবে খণ্ডকালীন কাজ করে ভালো আয় করা যায়। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে। ছুটির সময় পূর্ণকালীনও কাজ করা যায়।
২. মিসর
মিসরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি দেড় হাজার ডলার (১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি)। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. হাফিজুল ইসলাম জানালেন, বিজ্ঞান বিভাগের বাৎসরিক টিউশন ফি ৬ হাজার ডলার (প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা)। অন্যান্য বিভাগের জন্য ৪-৫ হাজার ডলার। তবে ধর্মসংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কম খরচে পড়ার সুযোগ আছে। মিসরে ২০০-৩০০ ডলার (২৪-৩৭ হাজার টাকা) খরচ করেই মাস চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।
৩. সৌদি আরব
সৌদি আরবে ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য বছরে প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ৮ হাজার ডলার (দেড় থেকে ১০ লাখ টাকা) খরচ হবে। কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ থাকে। পিএইচডি প্রোগ্রামে অনেক ক্ষেত্রেই বৃত্তির মাধ্যমে বিনা মূল্যে পড়া যায়। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ ৫০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ডলার (৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা)।
৪. মালয়েশিয়া
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিতে প্রতিবছর খরচ পড়ে দেড় থেকে সাড়ে ৮ হাজার ডলার (১ লাখ ৮২ হাজার থেকে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা)। বেসরকারিতে আরও বেশি। চিকিৎসা ও প্রকৌশলের মতো বিষয়ে খরচ অনেক বেশি হতে পারে। সেই তুলনায় জীবনযাত্রার খরচ কম। মাসে ৩০-৭০ হাজার টাকা।
৫. তুরস্ক
তুরস্কে পড়াশোনা বেশ সাশ্রয়ী। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব খরচে পড়ার সুযোগ খুব সীমিত। ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আব্দুর রহমান বলেন, ‘তবু বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই নিজ খরচে পড়তে এখানকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। প্রাইভেটে ব্যাচেলর পর্যায়ে ফি বছরে ৫-১০ হাজার ডলার। মেডিকেলে পড়লে খরচ আরও বেশি।’ তুরস্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শতাংশ আসন বরাদ্দ রাখা হয়। টিউশন ফি তুর্কি নাগরিকদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হলেও বেসরকারির তুলনায় সেটা অনেক কম।
৬. স্পেন
প্রতিবছর খরচ হবে ১ হাজার ৬০০ থেকে ৬ হাজার ডলার (২ লাখ থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা)। স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের পিএইচডি গবেষক অনুপমা নিলয়া বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ কমবেশি হয়। আবাসন, খাবার, পরিবহন এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মাসে অন্তত ৮০০ ডলার (৯৭ হাজার টাকার বেশি) খরচ হতে পারে। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো শহরগুলো অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যয়বহুল।’
৭. জার্মানি
জার্মানির বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টিউশন ফি নেয় না। প্যাডেরবর্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বিজয় রায় চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কেবল প্রতি সেমিস্টারে সেমিস্টার ফি দিতে হয়। এই ফি সাধারণত ২৫০-৪০০ ডলার (৩০-৫০ হাজার টাকা) হতে পারে। গণপরিবহনের জন্য একটি সেমিস্টার টিকিট এবং ছাত্র ইউনিয়ন ফি এর অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মাসে ১ হাজার ডলার (১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি) পর্যন্ত খরচ হতে পারে।’
৮. ফ্রান্স
ফ্রান্সে ব্যাচেলর ডিগ্রির বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় ৩ হাজার ৪৫ ডলার (৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি)। মাস্টার্সের জন্য প্রায় ৪ হাজার ১৫০ ডলার (৫ লাখ টাকার বেশি)। বিশেষায়িত বেসরকারি কলেজ ও বিজনেস স্কুলে খরচ এর চেয়ে বেশি হবে। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জীবনযাত্রার পেছনে মাসে ৬০০ থেকে ১০০০ ডলার খরচ হতে পারে। প্যারিসে এর চেয়ে কিছুটা বেশি।
৯. ফিনল্যান্ড
ফিনল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্নাতকের টিউশন ফি বছরে ৪ হাজার ৪০০ থেকে ১৯ হাজার ৭০০ ডলার (৫ লাখ থেকে ২৪ লাখ টাকা) পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিষয়ে খরচ সাধারণত বেশি হয়। মাস্টার্স প্রোগ্রামের টিউশন ফি ব্যাচেলরের মতোই। মাসে থাকা-খাওয়ার খরচ অন্তত ৮০০ ডলার (৯৭ হাজার টাকার বেশি)।
১০. ভারত
ভারতের বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে এমএসসি ইন বায়োটেকনোলজিতে পড়ছেন লিউনা লুবাইনা ইসলাম। বলেন, ‘ভারতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক টিউশন ফি এক-দেড় হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে (১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা)। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে খরচ কিছুটা বেশি। আবার প্রকৌশল বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো জনপ্রিয় প্রোগ্রামের খরচও কিছুটা বেশি হয়।’ ভারতে জীবনযাত্রার খরচ খুব বেশি নয়, একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মাসে আড়াই শ থেকে ৪ শ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আবাসন, খাবার, যাতায়াত এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ এর অন্তর্ভুক্ত। বড় শহরগুলোতে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। নিজস্ব অর্থায়নে পড়ার সুযোগের পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি আছে।