ফুডভ্লগার নুসরাত ইসলাম কেন ‘জলটান বিডি’ নাম নিলেন, এর অর্থ কী

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ উপস্থাপনা করতেন নুসরাত ইসলাম। তবে একসময় খবরের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে প্রবেশ করেন খাবারের দুনিয়ায়। ফুডভ্লগিং, মানে খাবার নিয়ে ভিডিও কনটেন্ট বানাতে শুরু করেন। আর তখন থেকেই তাঁর নাম হয়ে যায় ‘জলটান বিডি’। এই নামের অর্থ কী?

ফুডভ্লগার ‘জলটান বিডি’ হিসেবেই জনপ্রিয় নুসরাত ইসলামছবি: নুসরাত ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে

কনটেন্ট ক্রিয়েশনে কোনো আগ্রহ ছিল না নুসরাত ইসলামের। খুব একটা গুরুত্বও দিতেন না। তাঁর ভাষায়, ‘সত্যি বলতে, এ ব্যাপারে তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। অন্যরা কীভাবে কনটেন্ট বানায়, তা–ও কোনো দিন সরাসরি দেখিনি।’

তাহলে কীভাবে ফুডভ্লগিং শুরু করলেন? নুসরাত বললেন, ‘এর পেছনে পুরো অবদানই আমার স্বামীর। তিনিই সাহস জুগিয়েছেন। মূলত কিছুটা জোর করেই তিনি আমাকে রাজি করান। শুরুতে দ্বিধা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কাটতে শুরু করে।’

করোনাকালে একদিন একটা ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করেন নুসরাত। পরদিনই দেখেন, প্রায় ১২ হাজার ভিউ! খুব স্বাভাবিকভাবেই পেয়ে যান দারুণ অনুপ্রেরণা। নুসরাত বললেন, ‘এতে আত্মবিশ্বাসী হই, মানুষ আমাকে পছন্দ করছে। ভাবলাম, এখন যেহেতু ঘরে বসে অলস সময় কাটছে, তাই নতুন নতুন কনটেন্ট বানানোই যায়।’

বলা যায়, স্বামীর অনুপ্রেরণা ও দর্শকের ভালোবাসায় সংবাদ উপস্থাপক নুসরাত ইসলাম হয়ে ওঠেন আজকের জলটান বিডি। বর্তমানে তাঁর ফেসবুক পেজে অনুসারী ১৪ লাখ, ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৮৮ হাজারের বেশি।

ফুডভ্লগিংয়ের পাশাপাশি নুসরাত এখন নিয়মিত ভ্রমণবিষয়ক ভিডিও বানান
ছবি: নুসরাত ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে

নুসরাতের কনটেন্ট কেন আলাদা

দেশে এখন অনেক ফুডভ্লগার। এই প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে কী করেন? উত্তর দেওয়ার আগে কিছুক্ষণ ভাবলেন নুসরাত। তারপর বললেন, ‘এখন তো হাজার হাজার মানুষ নানা রকম কনটেন্ট বানাচ্ছে। আর প্রতিযোগিতা থাকাই ভালো। এটা সব সময় ভালো কাজ করার স্পৃহা জোগায়। তাই সব সময় চেষ্টা করি আমার কনটেন্টগুলোর বিষয় এবং উপস্থাপনা একটু আলাদাভাবে করতে। প্রতিটি কনটেন্টের শুরুতেই একটা আকর্ষণ রাখি, যাতে দর্শকের আগ্রহ থাকে।’

খাবারের পাশাপাশি এখন ভ্রমণের ভিডিও বানাচ্ছেন নুসরাত। নতুন নতুন দেশে গিয়ে নতুন বিষয়–আশয় তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যেমন কিছুদিন আগে গিয়েছিলেন মালদ্বীপ। সেখানে পানিতে গাড়ি চালানোর ভিডিও বানিয়ে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছেন।

কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নুসরাতের বিশেষত্ব কী? উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে স্পষ্টবাদী থাকার চেষ্টা করি। কোথাও ফুড রিভিউ করতে গেলে সব সময় তাঁদের প্রশ্ন করি। কোনো খাবারের দাম অতিরিক্ত মনে হলে ভিডিওতেই এর কারণ জানতে চাই। এই যে স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধ, আমার মনে হয় এসব দর্শক পছন্দ করে। যদিও এসবের জন্য অনেকেই আমাকে ফুড ভ্লগারদের মাফিয়া বলে। তবে আমার এতে কিছু যায়–আসে না। আমি স্পষ্টবাদী ও সাহসী থাকতেই পছন্দ করি।’

কনটেন্ট ক্রিয়েশনে আসা নতুনদের জন্য নুসরাতের পরামর্শ হলো, এখানে সফলতা পেতে হলে নিজস্বতা তুলে ধরতে হবে, তবেই দর্শক পছন্দ করবে। অন্যকে অনুকরণ করে টিকে থাকা যাবে না।

আরও পড়ুন
শখের বশে সংবাদ উপস্থাপনায় এসেছিলেন নুসরাত ইসলাম
ছবি: নুসরাত ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে

হতে চেয়েছিলেন কী

শখের বশে সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেছিলেন নুসরাত ইসলাম। তবে এটিই তাঁর প্রধান পরিচয় নয়। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা করবেন। নুসরাত বলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের ম্যামদের দেখতাম, কী সুন্দর টিপটপ হয়ে ক্লাস নিতেন তাঁরা! তাঁদের দেখেই মূলত আমার এই পেশার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল।’

পরে অবশ্য ছেলেবেলার ইচ্ছাটাকে বাস্তবেও রূপ দেন নুসরাত। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি স্কুলে যোগ দেন। পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপনাও করতে থাকেন। তবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের জগতে পা রাখার পর তিনটি পেশা একসঙ্গে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ২০২২ সালের শেষের দিকে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।

কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও সংবাদ উপস্থাপনার পাশাপাশি নুসরাত ইসলামের কী ভালো লাগে? নুসরাত বললেন, ‘আমার তো ঘুমাতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরতে খুব পছন্দ করি।’

আরও পড়ুন

আগামীর পথে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের স্বীকৃতি দিতে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্য মার্ভেল–বি ইউ ইনফ্লুয়েন্সার ফেস্ট অ্যান্ড অ্যাওয়ার্ডস’-এর তৃতীয় আসর। সেখানে সেরা ফুডভ্লগারের সম্মাননা পান নুসরাত ইসলাম। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘নিবেদিতা ইকুয়ালাইজার ২০২২’ উদ্যোগের আওতায় ৮টি বিভাগে ৯ জন নারীকে অনলাইনে তাঁদের অর্জনের জন্য সম্মানিত করা হয়। সেখানেও পেয়েছেন ফুডভ্লগিং ক্যাটাগরিতে বিশেষ স্বীকৃতি।

নুসরাত বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছি, পুরস্কৃত হয়েছি, যা দারুণ অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। তবে আমার ভিডিওগুলো অনেক মানুষ দেখে ও ভালোবাসে; এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। এ ভালোবাসা ও অর্জনকে সঙ্গী করেই ভবিষ্যতে আরও ভালো ভালো কনটেন্ট উপহার দিতে চাই।’

‘নিবেদিতা ইকুয়ালাইজার ২০২২’-এর পুরস্কার হাতে নুসরাত ইসলাম (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: নুসরাত ইসলামের ফেসবুক পেজ থেকে

‘জলটান’ মানে কী

নুসরাত বললেন, ‘“জলটান” মূলত হাঙ্গেগেরীয় শব্দ, এর অর্থ “জীবন”। আমার কাছে জীবনের মানে হলো খাবার এবং নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখা। আমার ভ্লগে এসব বিষয়ই তুলে ধরার চেষ্টা করি। তাই আমার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম রেখেছি “জলটান বিডি”।’

লক্ষ করুন: প্রিয় পাঠক, এই লেখায় এমন দুটি মন্তব্য এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, হাঙ্গেরীয় শব্দ ‘জলটান’ অর্থ সুলতান, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ইত্যাদি। কিন্তু নুসরাত ইসলাম কেন ‘জলটান’ অর্থ ‘জীবন’ বলছেন? প্রথমেই ধন্যবাদ দুজন পাঠককে, যাঁরা মন্তব্য করে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এটা ঠিক যে হাঙ্গেরীয় শব্দ ‘জলটান’ (হাঙ্গেরীয় উচ্চারণ ‘যোয়তান’) অর্থ সুলতান, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ইত্যাদি। তবে শব্দ বা নামটির আদি অর্থ ‘জীবন’ও বটে। প্রাচীন শব্দটির আছে ঐতিহাসিক পটভূমি। এটি নবম শতকে কার্পেথিয়ান অববাহিকায় বসতি স্থাপনকারী হাঙ্গেরীয় উপজাতিদের সঙ্গে যুক্ত। ‘জলটান’ বা ‘যোয়তান’ নামটি হাঙ্গেরীয় জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দশম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে।—বি.স.
আরও পড়ুন