‘আমি কমেন্ট পড়েও দেখি না’, বললেন কারিনা
‘আলোঝলমলে বিশাল এক মঞ্চ কল্পনা করা যাক। ধরা যাক, কোনো একটা পুরস্কার গ্রহণের জন্য সেই মঞ্চে আপনাকে ডাকা হলো। কোন পরিচয়ে পুরস্কারটা হাতে নিতে পারলে সবচেয়ে খুশি হবেন?’
দৃশ্যটা কল্পনা করেই বোধ হয় হাসিতে ঝলমল করে উঠল কারিনা কায়সারের মুখ। বললেন, ‘ভালো প্রশ্ন করেছেন তো! সবাই শুধু আমার কাছে জানতে চায়, কনটেন্ট ক্রিয়েশনের শুরুটা কীভাবে।’ প্রশ্ন কমন না পড়লেও উত্তর দিতে একদমই দেরি করলেন না, ‘এক বছর আগেও যদি জিজ্ঞেস করতেন, হয়তো অন্য কোনো উত্তর দিতাম। কিন্তু এখন আমি অভিনয়ের কথাই বলব। সত্যি বলতে অভিনয়ে আমার নিজের খুব একটা আত্মবিশ্বাস ছিল না। কিন্তু ৩৬-২৪-৩৬ যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের অনেকের এত প্রশংসা শুনেছি…তাই মনে হলো এই প্যাশনটা নিয়ে লেগে থাকলে হয়তো আরও ভালো করতে পারব। অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পেলেই ভালো লাগবে।’
খেলাচ্ছলে ফেসবুকে ছোটখাটো কনটেন্ট (আধেয়) তৈরি করতেন। একসময় বন্ধু, পরিচালক রেজাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ‘হাউজ অব কেয়স’ নামের একটি প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শুরু করেন। ৩৬-২৪-৩৬ চলচ্চিত্রটি এই প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানের অধীনেই তৈরি। বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতেও ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। সেখানে ‘সায়রা’ চরিত্রে কারিনার অভিনয় চমকে দিয়েছে অনেককে।
দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় কারিনাও কি চমকেছেন?
‘হ্যাঁ! আমার মনে হয় একটা সিনেমার পেছনে কাজ করার সময় এর কারিগরি দিক, সাউন্ড, ডাবিং, এগুলোর দিকে আমরা এত মনোযোগ দিয়ে ফেলি; একটা দৃশ্যই এত বারবার করি, বারবার দেখি…এসব করতে করতে সিনেমার ম্যাজিকটাই ভুলে যাই। একটা সময় মনে হয় কোনোমতে শেষ করতে পারলে বাঁচি। কিন্তু যাঁরা গল্পটা জানেন না, যাঁরা প্রথমবারের মতো ছবিটা দেখেন, ম্যাজিকটা কাজ করে তাঁদের ওপর।’
৩৬-২৪-৩৬ দেখে নাকি বহু দর্শক কারিনাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, বিশেষ করে নারীরা। অনেকেই বলছেন, গল্পের সঙ্গে তাঁরা নিজের জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছেন। একজনের কথা আলাদাভাবেই বললেন এই অভিনেত্রী, ‘একটা মেয়ে লিখেছে, ছবিটা দেখতে বসে ওর নিজের জীবনের ট্রমা (আঘাত) মনে পড়ে গিয়েছিল। এতবার প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে যে ছবিটা ও এক বসায় দেখতে পারেনি। থেমে থেমে দেখেছে।’
ব্যক্তিগতজীবনে কারিনা অবশ্য কোনো ট্রমাই মনে জমা রাখতে চান না। শরীরের গড়ন থেকে শুরু কনটেন্টের ধরন—সবকিছু নিয়েই ফেসবুকে লোকের হাজার রকম মন্তব্য। শুরুর দিকে নেতিবাচক মন্তব্য পড়ে যতটা না কষ্ট পেতেন, তার চেয়ে বেশি অবাক হতেন। আর এখন ওসব গায়েই মাখেন না। সোজাসাপটা বললেন, ‘আমি কমেন্ট পড়েও দেখি না।’
কারিনা মনে করেন, এই ইতিবাচকতা তিনি পেয়েছেন মূলত পরিবার থেকে। মজা করে বলছিলেন, ‘আমাকে আর কী পজেটিভ বলবেন! আমি যদি পজিটিভিটির ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর (জাতীয় দূত) হই, আব্বু তো ইন্টারন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর (আন্তর্জাতিক দূত)!’
মনে করিয়ে দিই, কারিনা বড় হয়েছেন ক্রীড়া পরিবারে। দাদি রানী হামিদ বাংলাদেশের কিংবদন্তী দাবাড়ু। বাবা কায়সার হামিদ ছিলেন জাতীয় দলের ফুটবলার। আর মা শাহনাজ সুলতানা কায়সার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।
কারিনার জীবনে পরিবারের প্রভাব অনেক। ছোটবেলা বাস্কেটবল খেলা থেকে শুরু করে গান শেখা—সবই করেছেন। কিন্তু দাবাটা তাঁকে টানেনি। বলছিলেন, ‘আমি আসলে খুব অস্থির। দাদি সব সময় বলে, “তোমাকে পরের ১০টা চাল আগেই ভাবতে হবে”, কিন্তু আমি তো শুধু পরের চালটাই ভাবি।’
আপাতত কারিনা কায়সারের পরের ‘চাল’ ইন্টার্নশিপ ২। আলোচিত এই ওয়েব ধারাবাহিকের প্রথম সিজনের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন তিনি। এখন দ্বিতীয় সিজন নিয়ে কাজ করছেন। পাশাপাশি নিজের মতো করে চলছে অভিনয়ের চর্চাও। কে জানে, ঝলমলে কোনো মঞ্চ হয়তো সত্যিই তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।