বাংলাদেশে পড়ালেখা, মালয়েশিয়ায় ইন্টার্নশিপ

ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ায় ইন্টার্নশিপ করতে গেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন ইফতেখার আহমেদ। পড়ুন তাঁর অভিজ্ঞতা।

স্টুডেন্ট মোবিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় এ সুযোগ এসেছেছবি: লেখকের সৌজন্যে

বিমানে ওঠার আগেই আমাদের পাঁচজনের মধ্যে একটা টস হয়ে গেল—কে বসবে জানালার পাশে! টসে কে জিতেছিল, সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে বলে নিই, আমরা কারা। যাচ্ছিলামই–বা কোথায়।

আমরা চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) পাঁচ শিক্ষার্থী—আমি, সাগর দাশ, রায়হান পারভেজ, নিজিয়া নওশিন চৌধুরী ও অর্পিতা চৌধুরী। পাঁচজনই ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ায় (ইউপিএম) দুই সপ্তাহের একটি ইন্টার্নশিপে আমরা এখন মালয়েশিয়ায় আছি। এসেছি ১১ সেপ্টেম্বর।

স্টুডেন্ট মোবিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় মূলত এ সুযোগ এসেছে। সিভাসু ও ইউপিএমের মধ্যেকার সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় প্রতিবছর এই প্রোগ্রামে আমরা চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিদেশে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাই।

আরও পড়ুন

প্রথম অভিযান

পাঁচজনের মধ্যে আমাদের চারজনেরই এটা প্রথম বিদেশ সফর। বোর্ডিং পাস সংগ্রহের সময়ই এত বেশি কাগজপত্র দেখাতে হলো যে ইমিগ্রেশন (অভিবাসন) প্রক্রিয়া নিয়ে একটু দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল। যদিও আমাদের হাতে অফার লেটার ছিল, কিন্তু ভিসাটা ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ নয়। কারণ, ইন্টার্নশিপের সময়কাল মাত্র দুই সপ্তাহ। আগে থেকেই শুনছিলাম, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন থেকে অনেক বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রথমবারের বিদেশযাত্রায় রোমাঞ্চের চেয়ে উদ্বেগটাই কাজ করছিল বেশি।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে অবশ্য কোনো সমস্যাই হয়নি শেষমেশ। তাঁরা দেখলাম আমাদের বেশ উৎসাহও দিলেন।

মালয়েশিয়ায় নেমে বাসা খুঁজতে খুঁজতেই প্রথম দিনটা গেছে। ডর্মে থাকার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তাঁরা যে বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন, সেটা আমাদের বাজেটের তুলনায় অনেক বেশি। হেঁটে হেঁটে অনেকটা পথ ঘুরে শেষমেশ আমরা একটা থাকার জায়গা পেয়েছি।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) পাঁচ শিক্ষার্থী এখন আছেন মালয়েশিয়ায়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কী থাকছে ইন্টার্নশিপে

আমরা যেহেতু এরই মধ্যে পাঁচ বছরের পড়ালেখা শেষ করেছি, এখানে মূলত মালয়েশিয়ার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করব। দেখব, নতুন কী কী প্রযুক্তি তাঁরা ব্যবহার করছেন, যা আমাদের দেশে নেই। বেশ কিছু গবেষণাগার ও শিক্ষাকেন্দ্র আমরা পরিদর্শন করব। এর মধ্যে আছে ভাইরোলজি ল্যাব, ব্যাক্টেরিওলজি ল্যাব, হিস্টোপ্যাথলজি ল্যাব, মলিকিউলার ল্যাব, ভেটেরিনারি হাসপাতাল, ইত্যাদি।

বিভিন্ন আধুনিক পরীক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কেও জানব। পাশাপাশি বড় প্রাণী ও ক্ষুদ্র প্রাণীর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হবে।

মালয়েশিয়ার একটা পোলো ক্লাবেও গিয়েছিলাম। বাংলাদেশে যেহেতু কোনো পোলো ক্লাব নেই, ঘোড়ায় চড়ার ক্লাবও বিরল, তাই ঘোড়া নিয়ে কাজ করার সুযোগ আমাদের কম। এখানকার পোলো ক্লাবে এসে অনেক কিছু দেখা–জানার সুযোগ হলো। সামনে মালয়েশিয়ার চিড়িয়াখানাতেও যাব। পশুপাখির চিকিৎসাপদ্ধতি দেখব।

আরও পড়ুন

যা কিছু এত দিন শুধু পাঠ্যপুস্তকে দেখে এসেছি, সেগুলো স্বচক্ষে দেখা ও প্রয়োগ করার আনন্দ অন্য রকম। এই ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে গবেষণা, প্রাণিচিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষত ওয়ান হেলথ প্রোগ্রামের আওতায় প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত বিভিন্ন রোগ (যেমন রেবিস, ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্স, কিউ-ফিভার) নিয়ন্ত্রণে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। দেশে নতুন গবেষণাপদ্ধতি উদ্ভাবন ও প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতেও এটি সহায়ক হবে।

আগেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, জাপান, ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ইন্টার্নশিপ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, শিক্ষকতা করছেন। কেউ দেশের খ্যাতনামা ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিতও হয়েছেন। গত বছর ইউপিএমে ইন্টার্নশিপ করা এক শিক্ষার্থী এখন যুক্তরাজ্যের গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।

ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুদ্দিন এবং ইন্টার্নশিপ সমন্বয়ক অধ্যাপক আমির হোসেন স্যারকে। তাঁদের সহায়তায় আমরা এই সুযোগ পেয়েছি।

সুযোগ হয়েছে পোলো ক্লাব ঘুরে দেখার
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

শিক্ষকদের আন্তরিকতা

এখন পর্যন্ত ইউপিএমে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। প্রথম দিন বাসে চড়তে গিয়ে একটু বিপাকেই পড়েছিলাম। সেখানেই মেডিসিন বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হল। বাড়ি সুদান। এখানে বাসের খোঁজখবর রাখার অ্যাপ আছে, জানতাম না। বাসের ভাড়া দেওয়ার নিয়মকানুনও জানা ছিল না। সেই শিক্ষক আমাদের তিনজনের ভাড়া তো দিয়েছেনই, সঙ্গে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছেও দিয়েছেন। তিনি না থাকলে গুগল ম্যাপ দেখেও চেনা কঠিন হয়ে যেত।

চোখের পলকেই দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই দেশে ফেরার বিমান ধরতে হবে। এখানে আসার সময় বিমানে জানালার পাশের আসনটা আমি পেয়েছিলাম। ফেরার পথেও এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না!

আরও পড়ুন